১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় ও হামলার ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আসাবুল হক ও দুইজন সহকারী প্রক্টরসহ ছাত্রলীগের ৬১ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে মতিহার থানায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করে এ মামলা করা হয়। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাবি ছাত্রদলের এক নেতার পক্ষ থেকে মামলার এজাহার দায়ের করা হয়েছে। মামলা এজাহারভুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ মামলার বাদী ও ছাত্রদল নেতা মো. তুষার শেখ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী এবং রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য। তার বাসা নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার আতাইকুলা গ্রামে।

মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন- সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য মো. সাকুিবল হাসান বাকী (৩০), হাবিবুর রহমান (২৯), মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (২৯), মো. হামিদুর রহমান হৃদয় (২১), মো. সোয়েব হাসান (২৩), রিদয় অধিকারী স্বচ্ছ (২৪), মো. গোলাম কিবরিয়া (৩০), মো. ফয়সাল আহমেদ রনু (৩১), মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাবু (৩০), আসাদুল্লাহিল গালিব (২৮), প্রশান্ত কুমার বৃত্ত (২৯), মনু মোহন বাপ্পা (২৬), সাইফ করিম রুপম (২৯), সাদিকুল ইসলাম সাদিক, তানভীর ইশতিয়াক (২৭), ইসরাইল হোসেন, চিন্ময়, হাসিবুল হক শান্ত, মো. কাইয়ুম মিয়া (২৭), আবদুল্লাহ আল মামুন (২৭), মো. মেহেদী হাসান মিশু (২৮), মো. হাসান লাবন (২৮), মো. আহমেদ সজীব (২৮), মো. শোভন কায়সার (২৬), মো. মিজানুর রহমান (২৮), মো. গুফরান গাজী (২৬), মো. রমিজুল ইসলাম রিমু, জন স্মীথ (২২), সৌমিত্র কর্মকার (২৪), মো. কাবিরুজ্জামান রুহুল, মো. আলফাত সায়েম জেমস, মো. খায়রুল আলম, মো. রাজিব হোসেন, ভাস্কার সাহা, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. হামীম রেজা সাফায়েত, মো. শফিউর রহমান রাথিক, জয়ন্ত সরকার, মো. রাশেদ আলী, মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, অয়ন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক চিরন্তন চন্দ্র, মো. মোমিন ইসলাম, মো. শাকিল আহমেদ, সুভ্রদেব ঘোষ, মো. শামীম হোসেন, ফয়সাল শেখ, মো. নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, মো. নাইম আলী, মো. প্রিন্স মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত মাহমুদ, সৌরভ শেখ বন্ধন, মো. মোমিন, রাহাত খান সময় (২৩), মো. সোহান, মো. শাওন (২৪), মো. ইসমাইল, সুদীপ, মো. আরাফাত হোসেন, মো. মুশফিক ও মো. আশিকুর রহমান অপু (২২)।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২২ মে উল্লিখিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র কলা ভবনের সামনে বেলা ১২টায় বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড, বাঁশের লাঠি, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা করেন এবং তার মোটরসাইকেল জিম্মি রেখে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তারা আবারও তাকে আটকিয়ে ১ লাখ টাকা আদায় করেন। এছাড়াও উল্লিখিত সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত হলের সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন।

এজহারে আরও বলা হয়, তৎকালীন রাবির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, সহকারী প্রক্টর ড. মাহফুজুর রহমান এবং ড. পুরনজিৎ মহালদারকে বিষয়টি জানানো হলে তারা উলটো বাদীকে শাসান এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন না বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে তাদের দায়িত্বে অবহেলা এবং ছাত্রলীগের পক্ষপাতিত্ব করার জন্য তাদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, তালিকাভুক্ত সব আসামি ক্যাম্পাসের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা সবাই পলাতক খুনি হাসিনার লাঠিয়াল হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর মারধর, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, মাদকসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলেন। বিগত সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে দানবে পরিণত হয়েছিলেন। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না করে তাদের স্বার্থ হাসিলে কাজ করেছেন। এখন দেশ থেকে স্বৈরাচার পতন হয়েছে তাই আমরা আশা করবো নির্যাতিত নেতাকর্মীরা ন্যায় বিচার পাবেন।

জুবায়ের জিসান/এফআরএস