বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী ও দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে দলটির রাজনীতি বন্ধের দাবি জানানো হয়।

সোমবার (৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

আবরার ফাহাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছে বাক স্বাধীনতাকামী শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই হক আদায়ের জন্য হলেও ছাত্রলীগের বিচার করতে হবে। ছাত্রলীগের অমানবিক নির্যাতনে আবরার ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে। এই খুনিদের বিচার করতে হবে। তাদেরকে ছাত্রসমাজ বয়কট করেছে। 

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকারের বর্ণনা দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম আলী বলেন, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে এতদিন ত্রাসের রাজনীতি করেছে। শিক্ষার্থীদের মুখ চেপে ধরেছে। বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল করছে। এসব অবৈধ ফ্যাসিস্টদের জবাব দিতে হবে।

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ বলেন, আবরার ফাহাদ ভাই আমাদের গর্ব। দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ত রক্ষায় আবরার ফাহাদ প্রথম শহীদ। দেশের ভালোর জন্য কথা বলায় ছাত্রলীগের গুন্ডারা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। কতটা অমানবিক হলে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে তা ভাবতেও ভয় লাগে। বাংলাদেশে এই ছাত্রলীগ নামে গুণ্ডালীগকে কোনো প্রকার রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। প্রতিটা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার হামিম বলেন, একটা সময় ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কজনক। ছাত্রলীগের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময় মারধরের শিকার হয়েছে। ছাত্রলীগের পাশাপাশি জগন্নাথে কাজ করতো শিক্ষকলীগ। আমার ফেসবুক অ্যাকটিভিটির কারণে ছাত্রলীগ সব সময় লেগে থাকতো। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জড়িত ছিল। আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করেছে ডিবি দিয়ে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদেরকে সব সময় হয়রানি করেছে। নূর নবীকে ক্যাম্পাস থেকে প্রশাসন ডিবির হাতে তুলে দেয়। এই বিচার করতে হবে। 

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হাসান ইমন বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলায় ছাত্রলীগের দালালরা বাসে আটকে আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেছে। এই সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে ফোন মানিব্যাগ ছিনিয়ে দেয়। ন্যায়ের কথা বললেই তারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে। 

স্মরণ সভায় ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌসিফ মাহমুদ সোহানের তত্ত্বাবধানে সঞ্চালনা করেন রাকিব হাসান। এসময় আরো বক্তৃতা রাখেন ছাত্র দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদ খান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহিয়ান বিন অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসিব, রিয়াজুর ইসলাম-সহ অনেকে। 

এমএল/জেডএস