ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, আমার মূল কাজ হবে শিক্ষা সংস্কার করা। আজকের নতুন বাংলাদেশ আর পেছনে ফিরে যাবে না। দেশের প্রতিটি অঙ্গন হবে দুর্নীতিমুক্ত। আমরা সবাইকে নিয়েই দেশ সংস্কারের মাধ্যমে শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে চাই। আমি আইন অনুসারে সব কাজ করব। আইন মেনে কাজ করলে কোথাও কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না। আমি তোমাদের সকল প্রস্তাব পূরণে কাজ করব। দায়িত্ব যখন নিয়েছি আমি আমার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকব। আমি তোমাদের উপাচার্য, আমি প্রতিদিন তোমাদের মুখ দেখতে চাই। 

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

উপাচার্য বলেন,  বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্পেশালাইজড বিশ্ববিদ্যালয়। যার বৈশিষ্ট্য অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় সাধন করা। আধুনিক শিক্ষাকে বাদ দিয়ে যেমন জাগতিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে না, তদ্রুপ ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন না ঘটালে সুন্দর সমাজ গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে না। এজন্য আমার মূল কাজ শিক্ষা সংস্কার।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রত্যাশা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত এবং গীতা পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা নিয়ে লিখিত সংস্কারমূলক দাবি পেশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট। এরপর উন্মুক্তভাবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন দাবি জানান।

লিখিত উল্লেখযোগ্য দবির মধ্যে রয়েছে- হলের গেস্টরুম এবং র‍্যাগিং বন্ধ করা, মেডিকেলের সেবার মান নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে শিক্ষকদের রেটিং করা, সেশনজট কমানো, হলের আবাসিকতা নিশ্চিত করা, পূর্ণ আবাসিক না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো বিভাগ না খোলা, সব বিভাগের রেজাল্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বই নিয়ে চাকরির পড়াশোনার সুযোগ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা ইত্যাদি।

উন্মুক্ত মতামতে শিক্ষার্থীরা  বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের সাউন্ড সিস্টেম ঠিক করা, প্রত্যেক বিভাগ আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় করে সিলেবাস প্রণয়ন করা, যেসব বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে সেসব বিভাগে দ্রুত সময়ের মধ্যে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া, আল কোরআন রিসার্চ সেন্টার খোলা, সেশনজটমুক্ত করা, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, সম্প্রতি প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক তানভীর মন্ডল, ইয়াশিরুল কবির সোরভসহ দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের যাবতীয় সমস্যা তুলে ধরেছি। আশা করি বর্তমান প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান করবে। আমরা চাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।

রাকিব হোসেন/আরএআর