ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে তোফাজ্জল নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। 

বিষয়টি তদন্তের জন্য হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক ড. শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, ড. আছিব আহমেদ আবাসিক শিক্ষক, সহকারী আবাসিক শিক্ষক ড. এম এম তৌহিদল ইসলাম, সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) এ. কে. এম. নূর আলম সিদ্দিকী।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে হলের শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

নিহত ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল। তার বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। জানা যায়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। 

একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায় ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপসম্পাদক জালাল আহমেদসহ হলের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধর করছেন। 

ভোর সাড়ে ৪টায় প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যান। সেখান থেকে পরে হল প্রাঙ্গণে এসে হলের পুরাতন ভবনের গেস্টরুম ও এক্সেসটেনশনের গেস্টরুম ঘুরে দেখেন। এই দুটি গেস্টরুমেই তোফাজ্জলকে মারা হয়। এসময় তিনি দুটি রুম সিলগালা করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটা-নয়টার দিকে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ‘চোরের গ্যাং’ শনাক্ত করতে তাকে জেরা করা হয়। তিনি কয়েকজনের ফোন নাম্বার মুখস্থ বলেন, যেগুলো সত্যতা পাওয়া যায়। এতে তাকে ‘চোর’ হিসেবে উপস্থিত ছাত্রদের সন্দেহ বাড়ে। পরে তাকে একদফা পিটুনি দিয়ে ক্যান্টিনে খাওয়ানো হয়।

দ্বিতীয় দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও পেটানো হয়। রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কেউ চুরি করতে আসলে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার কারো নেই। শিগগিরই মামলা করা হবে। আমরা সিসিটিভি ও অন্যান্য ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। 

কেএইচ/জেডএস