ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। পর মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করেন হলের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

নিহত ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল। তার বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। জানা যায়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। 

তার মৃত্যুর বিষয়টি ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। লাশটি মর্গে রাখা হয়েছে।  

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটা-নয়টার দিকে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ‘চোরের গ্যাং’ শনাক্ত করতে তাকে জেরা করা হয়। তিনি কয়েকজনের ফোন নাম্বার মুখস্ত বলেন, যেগুলো সত্যতা পাওয়া যায়। এতে তাকে ‘চোর’ হিসেবে উপস্থিত ছাত্রদের সন্দেহ বাড়ে। পরে তাকে একদফা পিটুনি দিয়ে ক্যান্টিনে খাওয়ানো হয়। 

পরে দ্বিতীয় দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও পেটানো হয়। একসময় তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

এদিকে মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। ভোর সাড়ে চারটার দিকে ফজলুল হক হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেছেন তারা। 

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ফলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মারধরের ফলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলির প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের যে নজির দেখা গেছে, তা আমাদের সমাজের বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের গুরুতর অভাবকে প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জরুরি ছিল এবং নতুন বাংলাদেশে আইন ও মানবাধিকারের শাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

কেএইচ/এমএসএ