অধ্যাপক ইনজামুল হক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ইনজামুল হককে বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের ইন্ধনে কিছু শিক্ষার্থী এমনটা  করেছেন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সভাপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও চার দিন আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অধ্যাপক ইনজামুল হক জুলাই বিপ্লবে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বেশ সরব ছিলেন। 

বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ৯ দফা দাবি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের নিকট যান শিক্ষার্থীরা। বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা সম্বলিত ৯ দফা লিখিত দাবি মতবিনিময় সভায় উত্থাপন করা হয়। দাবির মধ্যে পদত্যাগের কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকলেও কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের বক্তব্যে সভাপতির পদত্যাগ চান। এতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। শিক্ষক গ্রুপিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের দিয়ে এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীরা কথা বলার একপর্যায়ে তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নানা অপ্রীতিকর মন্তব্য করতে থাকেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে ঘটনাস্থলেই কান্না করেন শিক্ষকরা। এ সময় দাবি না মানলে বিভাগের সভাপতির পদত্যাগ দাবি করেন তারা। পরে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থী ও রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন সভাপতি।

পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, শিক্ষার্থীবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে এবং ব্যক্তিগত কারণে বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পালনে অপারগ বিধায় উক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি।

প্রতিবেদকের কাছে থাকা একটি ভিডিও বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে যায়, বিভাগের সভাপতি ইনজামুল হক পদত্যাগপত্রের একটি কপি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তুলে দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং তাতে স্বাক্ষরও করেন। দেখা যায় হঠাৎ পাশ থেকে সহকারী শিক্ষক বিপুল রায় চোখের ইশারা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু বলেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পদত্যাগপত্র নিজেদের হাতে নিতে অস্বীকার করেন ও ভারপ্রাপ্ত কারো কাছে দিতে বলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিপুল রায়ের এই এমন হঠাৎ আচরণ উপস্থিত শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ ঘটনায় সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায়ের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদকের কাছে একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

দাবি উত্থাপনের উদ্যেগ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বিভাগের সমস্যাসমূহ তুলে ধরেছি এবং নয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা বলেছি দাবি না মানতে পারলে পদত্যাগ করতে। 

এ বিষয়ে ইনজামুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা যতবার মৌখিক পদত্যাগ দাবি করেছেন আমার নিজের কাছে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শিক্ষক মনে হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভের জায়গা থেকে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বৈরাচারী মনোভাব, প্রহসণমূলক কর্মকাণ্ড, বিভাগের উন্নয়নে কোনো কাজ না করা, ডকুমেন্ট ছাড়া রিজাইন নিয়ে নাটকবাজি এবং কথা প্রসঙ্গে দুর্নীতির কথাও বলেছেন। এর পাশাপাশি আপনাদের এই আন্দোলনের সকল ব্যাচের সমন্বয়ক সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে একাধিকবার আমার পদত্যাগ চেয়েছেন। আমি মনে করছি মতবিনিময় সভায় তাদের উদ্দেশ্যই ছিল আমাকে পদত্যাগ করানো। এটা হয়ত কেউ তাদেরকে দিয়ে করিয়েছে। একদিন সেসব সাধুদের মুখোশ এমনিতেই উন্মোচন হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বলেছে তাদের দাবি মানতে অপারগ হলে ডিন ও শিক্ষার্থীদের বরাবর পত্র জমা দিয়ে সভাপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। আমি তাদের সকল সমস্যাকে এড্রেস করেছি। সব দাবি তো মানা সম্ভব নয়। তাই তাদের কথা মতো তাদের কাছেও পত্র জমা দিয়েছি। এরপরও আমি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সব সময় কাজ করে যাব।

এ বিষয়ে জানতে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায়কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি চাপ দিয়ে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে থাকা একজন বিভাগীয় সভাপতিকে পদত্যাগ করান তা কখনোই শিক্ষার্থী সুলভ আচরণ হয়নি। শিক্ষার্থীদের উচিত কারও দ্বারা উৎসাহিত না হওয়া। বরং শিক্ষার্থীদের উচিত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় বের করা।

প্রসঙ্গত, বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক ইনজামুল হক বিভিন্ন সময় ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে সরব ছিলেন। ছাত্রদের মাঝে তিনি এই কারণে বেশ জনপ্রিয়।  স্বৈরাচার সরকার পতনের পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পদত্যাগ করলেও কোনো বিভাগীয় সভাপতি পদত্যাগ করেননি। তবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মাত্র ৪ দিন বাকি থাকতেই তাকে অপমান এবং পদত্যাগে বাধ্য করায় বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাকিব হোসেন/আরএআর