শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ৪০ ব্যক্তি পদত্যাগ করেছেন। এতে ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে ক্লাস পরীক্ষা। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসিক বেতনও তুলতে পারছেন না। দপ্তর গুলোতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা এলেও অধিকাংশ সময় তারা অলস সময় পার করছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্লাসরুম তালাবদ্ধ। কর্মচারীরা একসঙ্গে গল্পগুজব করে সময় পার করছেন। বিভাগগুলোতে ২/১ জন করে শিক্ষক এলেও তারা ব্যক্তিগত কাজ করে চলে যাচ্ছেন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন মোট ৭৭৪ জন। তাদের মধ্যে শিক্ষক ২০৫ জন, কর্মকর্তা ১৩২ জন, কর্মচারী ৪০৩ জন, মাস্টার রোলে ২৪ জন।

জানা যায়, ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও প্রশাসনিক পদগুলো শূন্য হওয়ায় কার্যক্রম চালু হচ্ছে না। যার ফলে একাডেমিক কার্যক্রমও স্থবির। 

চলমান পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানান শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলনও করেন। এ সময় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অচলাবস্থা চলছে। এ অবস্থা নিরসন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। একইসঙ্গে আবু সাঈদ হত্যার বিচারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন ও বিশ্বমানের পাঠ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এমন একজন ব্যক্তিকে বেরোবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের দাবি জানান তিনি।

গত ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম চলমান রাখতে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেনকে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে এ নিয়োগের বিরোধিতা করায় ড. মোরশেদ হোসেন পরদিনই পদত্যাগ করেন।

এদিকে মাসিক বেতন ওঠাতে না পারায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইংরেজি বিভাগের কর্মচারী আব্দুস সোবাহান বলেন, আগস্ট মাস শেষ হয়ে গেছে বেতন পাই নাই। হাতে টাকা নাই। বাসা ভাড়াও দিতে পারছি না। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে তিনি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয় সচল রাখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ করায় বেতন–ভাতা উত্তোলনের বিষয়টিও থেমে আছে।

শিপন/এসএম