চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখন (চবি) কার্যত অচল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং দুই সহ-উপাচার্যের চেয়ার খালি। রেজিস্ট্রার পদে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ও আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা কে এম নুর আহমদ। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোও বন্ধ রয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্য না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সনদ উত্তোলন করতে পারছেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। কারণ মূল সনদে উপাচার্যের সই লাগে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পত দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজে থেকে অথবা শিক্ষার্থীদের চাপে পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গত ১২ আগস্ট উপাচার্য ড. আবু তাহের পদত্যাগ করেন।

এদিকে, প্রায় ১ মাস উপাচার্যহীন থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান ডিনস কমিটি। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন নিজামীকে। আওয়ামীপন্থি এ শিক্ষককে নিয়ে বর্তমানে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হেলাল নিজামী শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এছাড়া ক্যাম্পাসে তিনি ‘উগ্র মেজাজের লোক’ হিসেবে পরিচিত।

আবার হেলাল নিজামী আওয়ামীপন্থি হলুদ দল থেকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের নির্বাচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগের একটি উপগ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা করারও অভিযোগ আছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে চবির এক শিক্ষক বলেন, হেলাল নিজামী আওয়ামীপন্থি হলুদ দলের অনুগত শিক্ষক। শাখা ছাত্রলীগে তার অনুগত একটি উপগ্রুপও ছিল, যাদের তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত উপাচার্য মঈনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নির্দেশ এবং সৃষ্ট সংকটে জড়িত থাকায় হেলাল নিজামীকে সিন্ডিকেট থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুবি শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীরা।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে আর্থিক ও প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অনুরোধ না করে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা মানানসই হয়নি।

জানা গেছে, তিন উপাচার্যের আমলে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেছেন নুর আহমদ। এর মধ্যে দুই উপাচার্যের আমলেই চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অনৈতিক পন্থায় অর্থ উপার্জনের অভিযোগে একাধিকবার দুদকের মুখোমুখি হয়েছিলের চবির অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা। তবে প্রতিবারই টাকা দিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম থামিয়েছেন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠে এখনো কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। একারণে শিক্ষার্থীবান্ধব একজন শিক্ষককে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

চবি শিক্ষার্থী আসকর আলী বলেন, বর্তমানে অভিভাবকহীন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে চবিকে দ্রুত সচল করার দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন নিজামীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চবির (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বলেন, রেজিস্ট্রারের আওতাধীন যে কাজগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত করা হচ্ছে। এর বাইরের দৈনন্দিন ছোটখাটো কাজগুলো ডিনস কমিটির মাধ্যমে করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী কাজগুলো করা যাচ্ছে না।

এমআর/এসএম