রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, আমার একটি অঙ্গীকার হচ্ছে হলগুলোকে আমি সম্পূর্ণরূপে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়ব। এই জায়গায় আমি একটুও ছাড় দেব না। হলে যা চলেছে তা একবারেই অতীত ইতিহাস। হলে আর একজন ছাত্রও পেশিশক্তির চর্চা করতে পারবে না। হলে আর একটি সিট নিয়েও বাণিজ্য করতে পারবে না। যারা হলে বৈধ সিটের দাবিদার তারাই হলে থাকতে পারবে। হলে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আমি আমার সর্বশক্তি প্রয়োগ করব।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমি যা দেখছি তা হলো অনেক বড় একটি দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল যে কাজ লেখাপড়া এবং ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়া, এটা অনেক দিন থেকে বন্ধ আছে। দেশের যে পরিস্থিতি (গণঅভ্যুত্থান) ছিল এটা অস্বাভাবিক ঘটনা না। তারপরও একজন শিক্ষক হিসেবে আমার চাওয়া থাকবে যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। সেই হিসেবে শিক্ষার্থীদের শক্ত অংশগ্রহণ কামনা করছি।

অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, শিক্ষকরাও ক্লাসরুম থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসুক এটাই চাই।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা পঠন ও জ্ঞান অন্বেষণসহ গবেষণার যে কাজ, সেই কাজ অনেক দিন ধরে অবহেলিত হয়েছে। আমি এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যেন গবেষণা আবার তার ঠিক জায়গায় ফিরে আসে। এ ছাড়া সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।

এর আগে আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। অধ্যাপক নকীব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ২০০৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। গবেষণায় তার প্রধান আগ্রহের বিষয় হলো সুপার কন্ডাকটিভিটি এবং কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স। ১৯৯৮ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পদার্থবিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এ ছাড়াও ২০০৮ সালে টাওয়াস ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১১ সালে রাজ্জাক-শামসুন ফিজিক্স রিসার্চ পুরস্কারে ভূষিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। বিভিন্ন সময়ে তিনি শিক্ষক ও ছাত্রদের আন্দোলনে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে সরব ছিলেন। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য থাকলেও কখনো কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে তাকে দেখা যায়নি। এ ছাড়া গত ১১ আগস্ট রাবির জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি শুরু থেকেই ছিলেন সামনের সারিতে।

জুবায়ের জিসান/এমজেইউ