জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশকেও নিজেদের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য না হওয়ায় একাডেমিক ও অবকাঠামোগত দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অতিথি পাখির মতো অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে এসে কোনোমতে চার বছর অতিক্রম করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আখের গোছানোই তার মূল লক্ষ্য হয়ে যায়। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সম্পর্কে জানার আগেই ওই উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি মতবিনিময় সভায় এ হুঁশিয়ারি দেন তারা।

দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কি পরিমাণে সমস্যার মধ্য থেকে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে তা কেবল এখানকার শিক্ষার্থীরাই বলতে পারবে। এখানে ভিসি আসে ভিসি যায় কিন্তু আমাদের সমস্যা সমস্যাই রয়ে যায়। সবাই আশ্বস্ত করে সমস্যা সমাধানের কিন্তু কেউই সফল হয় না। তাই আমরা চাই, আমাদের অভিভাবক যিনি হবে তিনি যেন আমাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে আগেই অবগত থাকেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরই যেন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ইংরেজি বিভাগের সাকিব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে এমন কোনো শিক্ষক পাওয়া যাবে না যারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নেই। তাই কে উপাচার্য হবেন তার জন্য অবশ্যই সর্বপ্রথম আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সহায়তাকারী শিক্ষকদের বাদ দিতে হবে উপাচার্য হওয়ার তালিকা থেকে, তিনি যতই যোগ্য হন না কেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্য থেকেই আমরা আমাদের অভিভাবক চাই। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে দাবিগুলো আছে প্রশাসনের কাছে, সে দাবিগুলো যিনি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবেন অবশ্যই তিনি আমাদের উপাচার্য হবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, বিগত ১৯ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশিত অগ্রগতি লাভ করেনি। এর অন্যতম কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি ও ট্রেজারার না হওয়া। এসময়ে যে শিক্ষকরা দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন তারা রুটিন দায়িত্ব পালনেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রফেসরদের ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে যারা জানেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে যারা একাত্ম আছেন; এমন প্রফেসররাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং ট্রেজারার হবেন বলে আমরা আশা করছি। তাছাড়া ভালো গবেষক, ভালো শিক্ষক; পাশাপাশি সৎ, দক্ষ ও যোগ্য মানুষদের এ পদে আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নতির জন্য যোগ্য মানুষকে পদে বসাতে হবে।

এমএল/এসএসএইচ