কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রায় প্রতিটি হলেই ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, প্রায় ৩শ রুম ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রতিটি কক্ষ ভাঙচুরে ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকারও বেশি।

আন্দোলন চলাকালীন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাদের হলগুলো থেকে বিতাড়িত করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় প্রতিটি হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রুমগুলোতে ভাঙচুর ও তাদের জিনিসপত্র ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত হল গুলোর মধ্যে অন্যতম বিজয় একাত্তর হল, স্যার এ এফ রহমান হল, সূর্যসেন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, কবি জসিমউদদীন হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বেগম রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল। 

ভাঙচুরের রাত ও পরদিন সরেজমিনে বিভিন্ন হলে দেখা যায়, অধিকাংশ হলেই রুমগুলোর দরজা ও জানালা ভাঙা হয়েছে এবং ভেতরে ছাত্রলীগ নেতাদের আসবাবপত্র ভাঙা হয়েছে। আবার কিছু হলে রুমগুলোর শুধু দরজার কাঁচ ভাঙা হয়েছে। এছাড়া হলের অন্য কোণে আসবাবের কোনো ক্ষতিও হয়নি। শুধু দরজা ও জানালা ভাঙার পরেও প্রতি রুমে গড়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কীভাবে ক্ষতি হলো তাতে প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের। আসল ক্ষতির পরিমাণ এত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান তারিক বলেন, আমি যে হলে থাকি সে হলে ছাত্রলীগ নেতাদের রুমের দরজা ভাঙা হয়েছে সেটাও সম্পূর্ণ না। আবার কিছু দরজার শুধু কাঁচ ভাঙা হয়েছে। কিছু হলে শুনেছি দরজা জানাল সম্পূর্ণভাবে ভাঙা হয়েছে। হলগুলোর ৩০০ কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙচুরে ক্ষতি ৫ কোটি টাকা কীভাবে হয় আমার মাথায়ই ঢুকছে না। মনগড়া একটা হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এক বিবৃতিতে জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলো সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিম আহমেদ বলেন, আমরা ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে জেনেছি বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ তারা দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আমরা এই রিপোর্ট ইউজিসিকে পাঠিয়েছি। তারা সেটা দেখে আমাদের খরচ প্রদান করলে আমরা হল মেরামতের কাজ শুরু করবো।

কক্ষপ্রতি এত বেশি খরচ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু হলে তেমন কিছুই ভাঙা হয়নি, আবার এ এফ রহমান হলসহ বেশ কিছু হলে দেয়াল ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই। দেখলে মনে হবে কুড়াল দিয়ে দরজায় কোপানো হয়েছে। তবে ক্ষতির হিসেবটা ইঞ্জিনিয়াররা করেছেন। এখন কতটুকু ঠিক করে করা হয়েছে আমি বলতে পারবো না।

হলের কক্ষ ব্যতীত অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলরুম ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো সম্পদের ক্ষতি সাধনের তথ্য আমরা পাইনি। কয়েকটি হলে কিছু বাইক পোড়ানো হয়েছিল যেগুলো শিক্ষার্থীদের নিজেদেরই।

কেএইচ/এসএম