‘তারা আমাদের পানি বন্ধ করে দিল, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিল। সাইড থেকে যখন ঠিল মারা শুরু করল, তখন আমিসহ ৫০ জন শিক্ষক এবং প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন অফিসার, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা প্রায় নয় ঘণ্টার মতো না খেয়ে আছে, বিভিন্ন বয়সের মানুষ ছিল। কারো কারো ডায়বেটিসের সমস্যা আছে। তখন দেখলাম আমাদের আর কোনো উপায় নেই। আমরা হয়তো আর কিছুক্ষণ অবরুদ্ধ থাকলে মরে যেতাম। যারা বয়স্ক ছিল তাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।’

বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাবের সহায়তায় প্রশাসনিক ভবনে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। 

তিনি বলেন, ‘আমরা তিনবার তাদের সাথে বসেছি। আমার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তারা আমাদের কথা শুনেছে। আমরা একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে লক্ষ্য করলাম সেই শিক্ষার্থীরাই আমাদের কাছে এসে বলল, স্যার আমাদের হাতে আর কিছু নেই। বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা এখানে ঢুকেছে। আমার শিক্ষার্থীরা এ কাজ করেনি। বহিরাগতরা এসেছিল পরিস্থিতি ঘোলা করার জন্য।’

এর আগে, সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করতে যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাব। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ।  

এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসন ভবন অবরোধ করে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সেখানে আটকা পড়েন উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টা, জনসংযোগ প্রশাসকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ১০ জনের প্রতিনিধিকে যেতে বলেন উপাচার্য। তবে, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেওয়ায় ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় উপাচার্যসহ অনেককে। পরে পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাব যৌথ অভিযান করে অবমুক্ত হন তারা।

বর্তমানে ক্যাম্পাসজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে পুলিশ সদস্যসহ একটি জলকামান রাখা হয়েছে।

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন আমাদের অনুমতি দিয়েছে, তখন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেই ভিসিকে উদ্ধার করার জন্য। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ভিসি স্যারকে উদ্ধার করেছি। এছাড়া যে শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছিল তাদের বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। 

জুবায়ের জিসান/কেএ