ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় শহীদুল্লাহ্ হল থেকে চানখারপুল রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। 

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে চানখারপুলের কাছে অবস্থান নেয় বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। এ সময় বহিরাগতদের হাতে রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

আহত আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, টোকাইরা আমাদের ওপর লাগাতার ইটপাটকেল মেরেই যাচ্ছে। এমনকি অনেকে গুলিও মারছে। আমাদের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তারা ককটেল বিস্ফোরণ করছে। আমরা ভাইদের প্রতিশোধ না নিয়ে হলে যাব না। 

আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগের গুন্ডারা টোকাই ভাড়া করে আমাদের ওপর হামলা করেছে। বিকেল থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের গুলি ও ককটেলের বিপরীতে আমরা শুধু ইট মারতে পারছি। আমাদের সাহায্যে কেউ নেই। পুলিশও ছাত্রলীগের গোলাম।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

কেএইচ/এমজে