কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড়, রায়সাহেবের মোড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন পুরো সদরঘাট এলাকা। এ সময় শিক্ষার্থীরা- 'আন্দোলনে হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই', 'হই হই রই রই ছাত্রলীগ গেলি কই? 'আমার ভাইকে গুলি কেন, কুত্তালীগ জবাব দে', 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা', 'দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ'-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে রায়সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় গুলির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়া চার জন হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৬ ব্যাচের নাসিম এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী হাসিব। পরে তাদের ন্যাশনাল মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া ছুরিকাঘাতে তায়াফ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফ বলেন, চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এবং একজনকে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় পেয়েছি। গুলিবিদ্ধ চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ছুরিকাঘাতে আহত একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গুলির বিষয়ে রাজধানীর কোতয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নজরুল ইসলাম বলেন, গুলির খবর শুনেছি। তবে, আমরা এক গ্রুপকেই মিছিল করতে দেখেছি। অন্য কোনো গ্রুপ দেখিনি।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

শেষ খবর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

এমএল/জেডএস