ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় শহীদুল্লাহ হল থেকে চানখারপুল রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে লাগাতার ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পালটা চলতে থাকে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে চানখারপুলের কাছে অবস্থান নেয় বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় বহিরাগতদের হাতে রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। 

এর আগে বেলা ১২টা থেকে ঢাকার দুই মহানগর, থানা, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন। একই সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের হাতে রড, স্ট্যাম্প, লাঠি ও পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেউ তেজগাঁও থানা ছাত্রলীগ, কেউ সাভার উপজেলা ছাত্রলীগ, কেউ কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ এবং কেউ কেউ বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের আন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

শেষ খবর পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

কেএইচ/এমজে