১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি পরীক্ষায় পাস করার পর লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ‘প্রক্সিম্যান’ কাউছারের সঙ্গে চুক্তির অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে রেজার বিরুদ্ধে।

কাউছার জয়পুরহাট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্য ঢাবিতে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে নতুন দক্ষ ‘প্রক্সিম্যান’ খুঁজতে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করতে আসলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে ধরে নিয়ে জেরা করেন।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে শিক্ষার্থীদের জেরার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিকে এমন তথ্য জানিয়েছেন ‘প্রক্সিম্যান’ কাউছার আলী।

এসময় জেরার মুখে সব স্বীকার করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের তদন্তের পর শিক্ষার্থীরা তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন।

মূলত আজ শনিবার অনুষ্ঠিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ‘প্রক্সি’ প্রার্থী ঠিক করে দেওয়ার জন্যই চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। এ তথ্যের প্রমাণ হিসেবে কাউছার ছাত্রলীগের ওই নেতা আবু বকর সিদ্দিক রেজার সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন দেখান। সেখানে কাউছার আলীকে প্রবেশপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য আবু বকর সিদ্দিক রেজা দিয়েছেন বলে দেখা যায়।

ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে প্রার্থীর খোঁজে ‘রবিন’ নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন কাউছার আলী। মূলত রবিন নামটি ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী কৌশলে কাউছারকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী।

‘প্রক্সিম্যান’ কাউছার আলীর বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির কুয়াতপুরে। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি পড়ালেখা শেষ করেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে রেজার বাড়ি ওই জেলার ক্ষেতলার উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের দামগর গ্রামে।

আটক কাউছার আলী বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক রেজা এলাকা সম্পর্কে আমার মামা হন। তিনি জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। দীর্ঘদিন থেকে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তিনি প্রিলিমিনারিতে পাস করেন। তার লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি ভালো না। তিনি আমাকে বলেন, দেখো তো মামা, তুমি কোনও লাইন করতে পারো কি না। এরপর আমি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাতে চেয়েছি তাকে। তার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী পেলে পরীক্ষায় বসার জন্য ২০ হাজার টাকা এবং পাস করলে দেড় লাখ টাকার চুক্তিও হয়েছিল। মামা (রেজা) এখন ঢাকাতেই আছেন।

কাউছার কয়েকটি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষার্থী হিসেবে নিজেও অংশ নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, রেলওয়ের পয়েন্টসম্যান, খালাসি ও ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২-এর মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদসহ আরও বিভিন্ন পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ প্রার্থী হিসেবে অংশ নিই। গত ২৮ জুন রেলওয়ের পয়েন্টসম্যান পদের পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর হয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। গত বছরের নভেম্বরে রেলওয়ের খালাসি পদে পরীক্ষা একজন প্রার্থীর হয়ে পরীক্ষায় বসেছি। 

কাউছার আরও জানান, মূলত পরীক্ষায় বসার জন্যই তিনি ২০ হাজার টাকা করে নেন। নিজে পরীক্ষা না দিতে পারলে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দেন। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর পাস করলে চাকরিভেদে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দিলে তার সঙ্গেও এই টাকা ভাগাভাগি হয়।

এ বিষয়ে জানতে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত কার সঙ্গে চুক্তি করেছে, কার হয়ে কাকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়াবে এসব নিয়ে আমরা শক্তিশালী এভিডেন্স জোগাড় করার চেষ্টা করছি। সব এভিডেন্স আমরা হাতে পেলে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবো। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্সিম্যান খুঁজতে আসা কাউছারকে থানায় সোপর্দ করেন। অভিযুক্ত এখনও থানায় রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন৷ মামলার পরে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থায় (এনএসআই) কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসহ কয়েকটি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ দিতে গিয়ে কয়েকবার আটক হয়েছিলেন এই কাউছার আলী। এমনকি প্রক্সিকাণ্ডে তাকে হাজতবাসও করতে হয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন জয়পুরহাট প্রতিনিধি চম্পক কুমার

কেএইচ/পিএইচ