সার্বজনীন পেনশন বাতিল এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থানে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সার্বজনীন পেনশন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। এ ছাড়া, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার এসব দাবিতে একই সময়ে শাবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে অবস্থান, কর্মকর্তাদের আধাবেলা কর্মবিরতি, কর্মচারীদের আধাবেলা কর্মবিরতি এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজিত হয়। এ সময় চতুর্মুখী আন্দোলনে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে এসব দাবির প্রেক্ষিতে অবস্থান নেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা। আলাদা আলাদা র‌্যালি বের করেন শাবি শিক্ষক সমিতি এবং শাবি কর্মকর্তা সমিতি। এ ছাড়া, বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শাবির শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন কর্মচারীরা।

গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে করে বন্ধ রয়েছে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা। স্থগিত হয়েছে বিভিন্ন বিভাগে চলমান ফাইনাল পরীক্ষাও। এর আগে শিক্ষকদের ঘোষিত আধাবেলা এবং পূর্ণ কর্মবিরতিতে পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকলেও চলমান সর্বাত্মক আন্দোলনে স্থগিত রয়েছে সব বিভাগের ক্লাস এবং পরীক্ষা কার্যক্রম। সারা দেশে শিক্ষকদের চলমান এ আন্দোলনের ফলে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রয়েছে সেশনজটে পড়ার শঙ্কাও।

কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলছেন দাবি না মেনে নিলে শীঘ্রই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।

অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এবং কোটা বাতিল বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ যদি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, মেধাবী শিক্ষার্থীরা কি করবে? শিক্ষার্থীদের পক্ষে এমন অবহেলা এবং বৈষম্য মেনে নেওয়া সম্ভব না। তাই ২০১৮ সালে কোটা নিয়ে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল তা বহাল রাখতে হবে। যতক্ষণ না ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল থাকছে এবং কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।

এদিকে সার্বজনীন পেনশন বাতিল নিয়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা দ্রুত এ ব্যবস্থা বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক বর্মণ অসীম বলেন, এটি একটি বৈষম্যমূলক পেনশন ব্যবস্থা। দ্রুত সময়ে এ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। না হয় আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।

শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মেধা, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কর্মদক্ষতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। প্রত্যয় নামক সর্বজনীন পেনশন স্কিম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।

জুবায়েদুল হক রবিন/এমজে