সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।

এতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, অবিলম্বে যেন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করা হয়। না হলে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সব শিক্ষার্থীর সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে কোটা পুনর্বহাল প্রতিহত করা হবে।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘নো কোটা, নো ডিসক্রিমিনেশন’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’ সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন এবং কোটা বিরোধী এসব স্লোগান দিতে শোনা যায়।

এই আন্দোলনকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন উল্লেখ করে ঢাকা কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, আমরা মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে এক শ্রেণির মানুষ লাভবান হবে সেটি মেনে নেওয়ার মতো নয়। অবিলম্বে কোটা পদ্ধতি স্থায়ীভাবে বাতিল ঘোষণা করতে হবে। এমন দাবির পেছনে শিক্ষার্থীদের অনেক কারণ আছে। আমরা মনে করি, কোটা ব্যবস্থা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একজন শিক্ষার্থী বেশি নাম্বার পেয়েও নিয়োগ পাবে না, আর আরেকজন কম নাম্বার পেয়েও কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে যাবে এটি হতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে মেধার ভিত্তিতে হোক, যাতে যোগ্যতম প্রার্থীরাই চাকরি পায়। হাইকোর্টের যে রায় হয়েছে সেটি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকতেও কোটা পদ্ধতি স্থায়ীভাবে বহাল হতে দেওয়া হবে না।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, কোটার মাধ্যমে একটি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। কারণ কোটা ব্যবস্থার কারণে অনেক কম যোগ্য প্রার্থীরাও সুযোগ পেয়ে থাকে, যা সমান প্রতিযোগিতার নীতির বিরোধী। এতে মেধাবী প্রার্থীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এভাবে বৈষম্য দূর না হয়ে বরং বাড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত নিয়োগ প্রক্রিয়ার দাবি জানাই। শিক্ষার্থীরা চায়, দেশের উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিরাই সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত হোক।

কোটা পদ্ধতির অপব্যবহার এবং অনিয়মের কারণে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে করে আফজাল হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে সমস্যাগুলো কমে আসবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি হ্রাস পাবে। এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং দক্ষতা নিশ্চিত হয় না।

২০১৮ সালেও বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংশোধনের জন্য একটি বড় ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। শিক্ষার্থীরা সেই সময় কোটা ব্যবস্থার সংস্কার বা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল এবং পরে সরকার কিছু পরিবর্তন আনে। তবে, পরিপূর্ণভাবে কোটা বাতিলের দাবি তখন পূরণ হয়নি। যা এখনো শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে এই পদ্ধতি বন্ধ করা হোক।

সমাবেশ এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মিরপুর সড়কে নামেন। তারা সাইন্সল্যাবরেটরি মোড় ঘুরে নীলক্ষেত হয়ে পুনরায় ঢাকা কলেজের মূল ফটকে আসেন। পরে দুপুর ২টায় আবারো সাত কলেজের সব শিক্ষার্থী এখানে জড়ো হওয়ার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে প্রথম পর্বের আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণা করেন। আর অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে পুরো সময়জুড়েই পুরো এলাকা জুড়ে স্থানীয় নিউমার্কেট থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে।

আরএইচটি/জেডএস