সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) চলমান আন্দোলনে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০-১২ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলমকে আহ্বায়ক ও আমাকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিতে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম ও একই বিভাগের অপর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজ আলমকে সদস্য করা হয়েছে।

জানা যায়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের আরেকটি সংগঠন ব্যানার নিয়ে অংশ নেন। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বাধা দেন এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেন। পরবর্তীতে আবারও ব্যানার ছাড়া ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা কর্মসূচিতে অবস্থান নেন। পরে পুনরায় তারা তাদের সংগঠনের ব্যানার নিয়ে এসে কর্মসূচিতে অংশ নিলে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বাধা দেন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের ১০ জন আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিম হাসান, সহকারী রেজিস্ট্রার তৌসিকুল ইসলাম রাহাত, সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান, মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম।

অন্যদিকে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিকল্পনা দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আবু হাসান, প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীন, অর্থ দপ্তরের ডেপুটি অ্যাকাউন্টস অফিসার ইকবাল মিয়া এবং সহকারী রেজিস্টার আনোয়ার সাদাত।

ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহত মুরশীদ আবেদীন বলেন, সরকারের পেনশন নীতিমালার ওপরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট করছিলাম। সেসময় বাহাউদ্দিন গোলাপ, নজরুল, জুয়েল মাহামুদের নেতৃত্বে কতিপয় কর্মকর্তা আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর হামলা চালিয়েছে। চেয়ার, রড, লাঠি দিয়ে তারা হামলা করেছে। আমাদের ৫-৬ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছে, যারা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। আর এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন, আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তারা একসঙ্গেই ছিলাম ও আছি। যাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অনুমোদিত সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু সম্প্রতি সরাসরি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাওয়া গুটি কয়েক কর্মকর্তা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতিগত ভেদাভেদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মাঝেও একটি বিভেদ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এটি বুঝতে পেরে বিষয়টি আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল, তাই তারা ওই সংগঠনের কোনো অনুমোদন দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার ও কর্মকর্তাদের জন্য ইউজিসির সুপারিশকৃত অভিন্ন নীতিমালার ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। তারা সেখানে অংশগ্রহণ না করে আজ হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই অনুমোদনহীন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে আমাদের আন্দোলন স্থলে আসেন। তখন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া মাত্র আকস্মিক হামলা চালালে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়।

বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন, হামলা চালিয়ে এখন আমাদের নেতাকর্মী ও সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এর সঠিক বিচার আমরা চাই।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ