সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোতালেব।

তিনি বলেন, রাতের আঁধারে একটি কুচক্রী মহল এবং সচিবরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়েই সচিবালয়ে অফিস করতে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে অফিসে যাওয়ার কোনো অধিকার তাদের নাই। প্রয়োজনে আমরা তাদের যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেব।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে জানিয়ে মোতালেব বলেন, যতদিন যাবে আন্দোলন কঠোর হবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের দাবি যদি না মানা হয় তাহলে আমরা কর্ম বিরতি থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচিতে চলে যাব। সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে। পেটের তাগিদে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন আন্দোলনে উপস্থিত হবেন।

তিনি বলেন, সরকার প্রত্যয় স্কিমকে পেনশন স্কিম বললেও এটি আসলে পেনশন স্কিম নয়। এটি অনেকটাই লাইফ ইন্সুরেন্সের মতো। এই লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে পেনশন স্কিম বলে যারা এটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন তাদের আমরা সাবধান করে দিতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তার ৬১টা ধারা আছে। ৩৮ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, পেনশন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। যদি সরকার এতে হস্তক্ষেপ করে তবে সেটি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন পরিপন্থি। এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা এখানে বাস্তবায়ন করতে দিতে পারি না। এজন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের আন্দোলন চলবে।

চলমান আন্দোলনের সময় অফিসের কাজ করতে চাপ দেওয়া হলে অফিস প্রধানদের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন ঢাবি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন। তিনি বলেন, আন্দোলন চলা অবস্থায় কোনো অফিস প্রধান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না। আগামীকাল থেকে আপনারাও মাঠে নামুন। অন্যথায় অফিস প্রধানদের কক্ষেও তালা মেরে দেওয়া হবে। এরপরও যদি কেউ চাপ প্রয়োগ করেন তাহলে কর্মচারীকে পরিষদ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মাত্র ৯ হাজার টাকার স্কেলে চাকরি শুরু করি। সবমিলিয়ে ১৪-১৫ হাজার টাকা বেতন পাই। যা দিয়ে সংসার চলে না। আমরা ঠিকমতো সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারি না। ভালো-মন্দ খাওয়াতে পারি না। সেজন্য পেনশন নিয়ে বড় আশা করে থাকি। আমাদের এই সুবিধাটুকু এখন কেড়ে নিতে চাচ্ছে। আজকে আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন করছি। আগামীকাল সচিবালয়ের সামনে গিয়ে আন্দোলন করা সম্ভাবনা আছে। আপনারা শান্তিতে অফিস করতে পারবেন না। একটা সমাধান না করা পর্যন্ত আপনাদের (সচিবদের) গাড়ির চাকা ঘুরবে না। ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা রাস্তা আমরা বন্ধ করে দেব। আপনারা সচিবালয়ে যেতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আগামীকাল থেকে আমরা সর্বাত্মক কর্ম বিরতিতে যাব। এই সময়ের মধ্যে অফিস প্রধানরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না। আমরা যে বেতনে চাকরি করি তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকাটা কষ্টকর। তারপর আবার এই স্কিম চাপিয়ে দিলে আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে। তাই এই আন্দোলনের মাধ্যমে এটি বাতিলের দাবি করছি।

চলমান এই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন।

আরএইচটি/এস এম