হাইকোর্টের দেওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের সূচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিল চেয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী।

সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, মল চত্বর, ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুন আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।

এছাড়া, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, বর্তমানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটার পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও গলাকাটা পোষ্য কোটা দেওয়া হয়েছে। এই পৌষ্য কোটার ফলে কর্মচারী শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। একটি পরিবারের একজন যেখানে চাকরিতে রয়েছে, সেখানে অন্যদেরও সেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমার আপনার বাবা-মা যারা শ্রমজীবী, কৃষক, কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ তাদেরকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, স্বাধীন এই বাংলায় কোটা বৈষম্যের কোনো স্থান নাই।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে আপামর ছাত্র জনতার কথা বিবেচনা করে তিনি কোটা বাতিল করেছিলেন, সেখানে হাইকোর্ট থেকে কীভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয়? আজকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার আগপর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী হিমু বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, আমরা না কি মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা শুধু বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নয়। আজকে তারা বলছে তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পায়। বছরে দুই ইদ ও বিজয় দিবসে ভাতা পায়। অথচ দেশের অসংখ্য পরিবারের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার অনেক কম। যেখানে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে, তাদের সন্তান-নাতি-নাতনীরা শুধু পাশ করতে পারলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। অথচ অনেক শিক্ষার্থী মেধাবী হয়েও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে কীভাবে তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হলো? বৈষম্যমূলক কোটার বাতিল না করা হলে ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে। 

প্রসঙ্গত, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

কেএইচ/কেএ