সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং আগের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৪টি বানান ভুল ও অসংগতি লক্ষ্য করা গেছে। 

রোববার (৩০ জুন) ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ভুলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ভুলগুলো চিহ্নিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন মিশন।

বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী, ওই নোটিশের ভুলগুলো হলো, ‘১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ১ জুলাই, নিবেন, স্কিম সংক্রান্ত, দাবীতে, ১ জুলাই, নিম্নরূপ, ক্লাশ, অনলাইন ('অনলাইন নয়; অনলাইন ক্লাস। অন্যগুলোর সঙ্গে 'ক্লাস' লেখা হয়েছে), সান্ধ্যকালীন, কোর্সের ক্লাশ, কোন, একাডেমিক, নবীন বরণ, গ্রহন, ইন্সস্টিটিউটের, ইন্সস্টিটিউটের অফিস, কেন্দ্রীয় (এ-কারের উপর মাত্রা দেওয়া হয়েছে), লাইব্রেরী, সারথী, ম্যানডেট, স্বায়ত্ত্বশাসনের, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের, অন্তর্ভূক্তি', মোঃ (এখানেও এ-কারের উপর মাত্রা দেওয়া হয়েছে)। একই বানান বারবার ভুল করায় পুনরাবৃত্তি এড়াতে সেগুলো একবার করে উল্লেখ করা হয়েছে।

উপর্যুক্ত অসংগতি ও ভুল বানানগুলোর প্রমিতরূপ হলো, ‘১৬ই আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ শে জুন ২০২৪, ১ জুলাই, নেবেন, স্কিমসংক্রান্ত, দাবিতে, নিম্নরূপ, ক্লাস, সান্ধ্য বা সন্ধ্যাকালীন, কোর্সের ক্লাস, কোনো, অ্যাকাডেমিক, নবীনবরণ, গ্রহণ, ইন্সটিটিউটের বা ইনস্টিটিউটের, লাইব্রেরি, সারথি, ম্যান্ডেট, স্বায়ত্তশাসনের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বা বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের, অন্তর্ভুক্তি।’

উপর্যুক্ত নোটিশে যে ভুলগুলো হয়েছে, তার মধ্যে কিছু ভুলের ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো;

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের পরিশিষ্ট ‘গ’-এ বাংলা তারিখ ও সময় লেখার নিয়ম বিধৃত হয়েছে। বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়েছে: অ্যাক বৈশাখ, অ্যাগারো জ্যৈষ্ঠ, শোলো ডিসেম্বর, পোঁচিশ বৈশাখ প্রভৃতি উচ্চারণ অশুদ্ধ। শুদ্ধ ও মান্য রীতি: পয়লা বৈশাখ, অ্যাগারোই জ্যৈষ্ঠ, শোলোই ডিসেম্বর, পোঁচিশে বৈশাখ প্রভৃতি। উপর্যুক্ত নোটিশে সব তারিখের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। 

‘-সংক্রান্ত’ শব্দাংশের স্বাধীন ব্যবহার নেই। এটি সর্বদা অন্য শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। সূত্র: সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম। ‘সংক্রান্ত’ পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। সূত্র: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (বাএআবাঅ), পৃষ্ঠা: ১২৬৪।

সান্ধ্যকালীন’ শব্দটি ভুল, অর্থহীন ও হাস্যকর 

‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘সান্ধ্য’(সন্ধ্যা+অ) শব্দের অর্থ সন্ধ্যাকালীন, সন্ধ্যাবেলার, সন্ধ্যাসম্পর্কিত। সে হিসেবে ‘সান্ধ্যকালীন’ শব্দের অর্থ হয়— যথাক্রমে ‘সন্ধ্যাকালীনকালীন, সন্ধ্যাবেলার, সন্ধ্যাসম্পর্কিতকালীন। কাজেই, ‘সান্ধ্যকালীন কোর্স’ শব্দের অর্থ হয়— সন্ধ্যাকালীন কোর্স, সন্ধ্যাবেলার কোর্স, সন্ধ্যাসম্পর্কিতকালীন কোর্স। মূলত ‘সান্ধ্য’ শব্দের অর্থ ‘সন্ধ্যাকালীন’। সুতরাং সান্ধ্যকলীন নয়; সঠিক হবে সন্ধ্যাকালীন বা সান্ধ্য।

‘কোন’ শব্দটি যখন সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ: কী, কে, কোনটি (কোন দিন, কোনটি চাই, কোন জন)। এটি কোনও বা কোনো শব্দের সমার্থক নয়। যেমন: ‘আপনি কোন দেশে থাকেন’ বাক্যে একই অর্থ: প্রকাশের জন্য ‘কোনও’ বা ‘কোনো’ পদ ব্যবহার করা যাবে না। বাক্যে সর্বনাম ও বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘কোনো’ শব্দের অর্থ: অনির্দিষ্ট বা অনির্ধারিত একজন লোক বিষয় বা বস্তু, কে বা কী (কোনো বিষয়), বহুর মধ্যে একটি বা একজন বাএআবাঅ, পৃষ্ঠা: ৩৩৭, ৩৩৮। নোটিশে ‘কোনো’-এর পরিবর্তে সব জায়গায় ‘কোন’ লেখা হয়েছে। 

২০১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুস্তিকার ২.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলায় এ বর্ণ বা -েকার দিয়ে এ এবং অ্যা এই উভয় ধ্বনি নির্দেশিত হয়। যেমন: কেন, কেনো (ক্রয় করো); খেলা, খেলি; গেল, গেলে, গেছে; দেখা, দেখি; জেনো, যেন; ব্যাঙ, ল্যাঠা। তবে, বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র অনুযায়ী অ্যা বা ্যা-কার ব্যবহৃত হবে। সেক্ষেত্রে ‘একাডেমি’ না হয়ে ‘অ্যাকাডেমি’ হবে।

বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম পুস্তিকার ২.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি ও মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন ব্যবহৃত হবে। কারণ বাংলায় উচ্চারণগত দীর্ঘস্বর নেই। ই ঈ এবং উ ঊ প্রভৃতির উচ্চারণ অভিন্ন। তাই অতৎসম (দেশি, বিদেশি) শব্দে ঈ-কার নিষ্প্রয়োজন। তবে, ‘লাইব্রেরী’ ও ‘দাবি’ শব্দের মতো বিদেশি বানানে ঈ-কার দিয়ে লেখা হয়েছে।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের ৫৫ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘ভুক্ত’ বানানে ঊ-কার পরিহার্য। তবে, নোটিশে ‘অন্তর্ভূক্তি’ লেখা হয়েছে, যা ভুল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

কেএইচ/কেএ