ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। এতে গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২.১২ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ বাড়লেও সেটি আশানুরূপ নয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, নতুন অর্থবছরের বাজেটে আলাদাভাবে গবেষণা, উদ্ভাবন ও শিক্ষা উন্নয়ন খাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে গবেষণায় উন্নতির পাশাপাশি বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে ঢাবির ভালো অবস্থান অর্জনও কঠিন হবে মনে করেন তারা। 

বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই বাজেটের চূড়ান্ত অ

নুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের বাজেট উপস্থাপন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এতে সভাপতিত্ব করবেন সিনেট চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। 

জানা যায়, এ বছর ঢাবিতে গবেষণায় মোট বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ২.১২ শতাংশ। গত দুই অর্থবছরে যা ছিল ১৫ কোটি টাকা, মোট বাজেটের ১.৬৩ শতাংশ। টাকার হিসেবে বরাদ্দ বেড়েছে পাঁচ কোটি টাকা। তবে, বরাদ্দ বাড়লেও তা মোট বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে মনে করছেন গবেষকরা। কম বাজেটের ফলে ঢাবির গবেষণা খাতের মান অবনমনের পাশাপাশি বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে বলেও মনে করছেন তারা।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির একজন গবেষক ও অধ্যাপক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ যদি গবেষণায় না দেওয়া হয়, সেটি কীভাবে ভালো বাজেট হলো? হাজার কোটি টাকা বাজেট হচ্ছে, কিন্তু এর অধিকাংশই যাচ্ছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেই৷ বিশ্ববিদ্যালয় হলো গবেষণার জায়গা, আর এখানেই বরাদ্দ কম। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নতমানের গবেষণা না হলে একটি দেশ কীভাবে উন্নত এবং স্মার্ট হবে? তাছাড়া গবেষণার মান খারাপের কারণেই ঢাবি বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে৷ উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

ঢাবির ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ঢাবির বাজেট হওয়া উচিত দুই-তিন হাজার কোটি টাকা। আর এর গবেষণা বাবদ বরাদ্দ হওয়া উচিত ৫০-৬০ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের মূল বাজেটেই শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশেরও অনেক কম। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনও আয়ের উৎস নেই, সেহেতু আমাদের সরকারের কাছেই হাত পাততে হয়। 

তিনি বলেন, ঢাবির বরাদ্দকৃত মূল বাজেটের অধিকাংশই খরচ হয় ভৌত খাতে। ফলে সরকার বাজেট না বাড়ালে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেও সম্ভব না। ঢাবির গবেষণার মান বাড়াতে সরকারের অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া উচিত। ঢাবিতে অন্তত ৫০টি প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ থাকা উচিত, যা যোগ্য প্রার্থীরা পাবে এবং গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ করবে। তাছাড়া, সরকারি প্রকল্পে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার ফান্ড থাকা উচিত, যা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে।

গবেষণায় কম বরাদ্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিংয়ের অবনমন করছে কি না? জানতে চাইলে এই ইমিরিটাস অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বেশি বরাদ্দ ছাড়া ভালো গবেষণা সম্ভব না। আর ভালো গবেষণা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিংয়ের উন্নতিও হবে না। কিন্তু আমাদের গবেষণাগারগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। ফলে বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়া ভালো মানের গবেষণা সম্ভব না এবং র‍্যাংকিংয়ের উন্নতিও সম্ভব না। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট খাতে যেন আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেজন্য আমি সরকারের কাছে অবেদন জানাই।

ঢাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গবেষণা খাতে বরাদ্দ কম থাকার জন্য দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে ১১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম বরাদ্দ দিয়েছে। তাছাড়া, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়কে অযথা বাড়তি দেখিয়ে বরাদ্দ হ্রাস করেছে। ফলে আমাদের গবেষণায় বরাদ্দ তুলনামূলক কম হয়েছে। 

এবার বাজেটে ঢাবির চাহিদা ছিল ১১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাদ্দ করেছে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম। 

গত ১১ জুন এই অর্থবছরের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার প্রস্তাবিত পরিচালন বাজেট অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এর মধ্যে বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ ৬৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ; গবেষণা বাবদ ২০ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২.১২ শতাংশ। ইউজিসি থেকে পাওয়া যাবে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট আয়ের ৮৫.১১ শতাংশ। নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৫.৩৭ শতাংশ।

কেএইচ/কেএ