জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের পাড় ভেঙে বেহাল দশা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের খনন করা দৃষ্টিনন্দন লেক ভেঙে পড়েছে। লেকের পাড়ের বিস্তর জায়গায় ধরেছে ফাটল। খসে পড়েছে লেকের পাড় ও জিও শিট। নিম্নমানের কাজ ও সঠিক তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারিয়েছে নবনির্মিত এই লেক। দায়সারা এই কাজের ফলে ক্ষতি হচ্ছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জিও ব্যাগ দিয়ে পুরো লেকের পাড় ঢেকে দেওয়ার কথা থাকলেও অল্প কিছু জায়গায় ঢাকা হয়েছে। যে-সব জায়গায় জিও ব্যাগ দিয়ে ঢাকা হয়নি সেসব স্থানে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। এ সব ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে লেকের পাড়। শুধু তাই নয় লেকের পাড় ঘেঁষেই কাটা হয়েছে মাটি। এর ফলে পাড় ধসে পড়ার সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। লেকের মাটি কাটার ফলে ইতোমধ্যে অনেক স্থানে লেকের পাড় ভেঙে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রকল্প এখনো বুঝিয়ে নেওয়া হয়নি ঠিকাদারের কাছ থেকে। ঠিকাদার এখনো চার কোটি টাকা পাওনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। এখন যদি লেকের পাড়ে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেটা ঠিকাদারের কাছ থেকে রিপেয়ারিং করা হবে। হস্তান্তরের আগেই কেন লেকের পাড়ের এ বেহাল দশা ও কাজের মান নিয়ে নিয়ে জানতে চাইলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে দুই বছরের মেয়াদে ২৪ কোটি টাকার লেকের প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকা রিভাইস বাজেট করে অর্থ হাতিয়ে নিলেও প্রকল্পের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ শিক্ষকরা। নতুন ক্যাম্পাসে প্রাথমিক প্রকল্পটির আওতায় রয়েছে জমি ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন, পুকুর, লেক, ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্ল্যানিং ভবন, রাস্তা নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সংযোগ, সীমানা প্রাচীরের কাজে দুই হাজার কোটি টাকার প্রতিটি কাজেই রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের অভিযোগ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লেকের পাড় রক্ষার জন্য এর আগে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। গাছের পরিবর্তে কাপড়ের পর্দায় (জিও শিট) পাড় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। একই প্রকল্পে একাধিক টেন্ডার করার পরিকল্পনা নিয়ে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ত্রুটিপূর্ণ এই লেকের বিষয়ে ক্ষিপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, আমাদের নতুন ক্যাম্পাসে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিছুদিন পরপরই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তারপরও আমরা দেখছি একই কোম্পানি বারবার সেই কাজের দায়িত্ব পায়। এমন জোড়াতালির কাজ আমরা চাই না।
লেকের সার্বিক বিষয় ঠিকাদার ওমর ফারুক রুমিকে জিজ্ঞেস করা মাত্রই তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, যেহেতু আমরা এখনো লেকের কাজ ঠিকাদারের কাজ থেকে বুঝে নেইনি তাই তাই লেকের এ ধরনের ফাটল তারাই ঠিক করে দেবেন। নতুন মাটি দিয়ে এ রকমের পাড় তৈরি করলে মাটি সম্পূর্ণভাবে শক্ত না হওয়া পর্যন্ত ফাটল ও ভেঙে পড়ার একটু সম্ভাবনা থাকে। এটা যেন ঠিকাদারের কাছ থেকেই আবার করিয়ে নেওয়া যায় তার জন্যই আমরা ঠিকাদারের ৪ কোটি টাকা আটকে রেখেছি।
এমএল/এএএ