ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ২৩ নেতাকর্মীকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২২ নেতাকর্মীর হল, বিভাগ ও পরিবারের নিকট শোকজ চিঠি পাঠানো গেলেও একজন কর্মীকে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনের। তার নাম এবং রোল নম্বর কিছুই মিলে না। পরে জানা গেল সেই ছাত্রলীগকর্মী চবির ভুয়া ছাত্র।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ইতিহাস বিভাগের ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সময় নাম ও রোল নম্বর গরমিলে ধরা পড়েন এই ভুয়া শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন হাসান রাব্বি (ফেসবুক নাম)। গত দুই বছর ধরে নিয়মিত ইতিহাস বিভাগে ক্লাস করছেন তিনি। থাকছেন আবাসিক আব্দুর রব হলেও। বৃহস্পতিবার ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০২ নম্বর ক্লাস টেস্টের সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার সময় ওর নাম না পেলে সন্দেহ হয় কোর্স শিক্ষক গোলাম কুদ্দুস লাভলুর। পরে একান্তে ডেকে নিয়ে তিনি জানতে পারেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থী না।

বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি হাসিবুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই ইমন (ভুয়া নাম) নিয়মিত ক্লাস করত। ২২১০৩১১২ আইডি নম্বরে সে উপস্থিতি দেখাত। তবে এ আইডি নম্বর বাংলা বিভাগে মাইগ্রেশন হওয়া লিমন নামের আরেকজন শিক্ষার্থীর। এ ছাড়া বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ট্যুরগুলোতেও সে অংশগ্রহণ করত। কিন্তু প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ইমন অংশগ্রহণ করেনি। তবে যখন রেজাল্ট প্রকাশ হলো তখন সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানায় তার রেজাল্ট সিজিপিএ ৩.৩৮। ওইদিন আমি খুব অবাক হই। আজ এ ঘটনার পর হলে গিয়ে দেখি ওর আইডি নম্বর, নাম এবং রেজাল্ট কিছুই নেই। এরপর ওর আসল আইডি নম্বর জানার জন্য ওর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি কিন্তু ওরা কিছুই বলেনি।

এ বিষয়ে চবির ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস লাভলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট ছিল। পরীক্ষা নেওয়ার পর স্বাক্ষর করার সময় ওর (ইমন হাসান রাব্বি) নাম ও রোল জানতে চাইলে সে সঠিকভাবে বলতে পারেনি। একবার নিজেকে লাবিব শিকদার নামে পরিচয় দিচ্ছে, তো আরেকবার ইমন হাসান রাব্বি নামে। তখন আমি ধারণা করলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে, ওখানে হয়ত ওর নাম রয়েছে। এজন্য ভয়ের কারণে সঠিক নাম বলছে না। পরে জানা গেল সে এ বিভাগের শিক্ষার্থীই নয়।

ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা হায়দারের নিকট জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আর আপনারা কেন ইতিহাস ডিপার্টমেন্ট নিয়ে পড়ে আছেন? অন্য ডিপার্টমেন্টও দেখেন এমন অনেক ভুয়া শিক্ষার্থী আছে। তাদের খোঁজ নেন।

এর আগে গত ২১ মে দুপুর ২টায় হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চবির ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সিএফসি ও বিজয়ের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ২৩ নেতাকর্মীকে শোকজ করে তদন্ত কমিটি। ২৩ জনের মধ্যে নাম রয়েছে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যে ২৩ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের সবার বিভাগ, হল ও পরিবারের নিকট চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তবে ইমনের নামে চিঠি দিতে গিয়ে দেখি অ্যাকাডেমিক শাখায় ওর নাম, আইডি নম্বর মিলছে না। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। পরে তার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সে নিয়মিত ক্লাসও করে। এ বিষয়টি আমরা বিভাগের একজন শিক্ষককে জানাই। তিনি বিভাগের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অসংলগ্ন উত্তর দিতে থাকে। নিজের নাম-পরিচয় এমনকি মা-বাবার নামও ভুল বলে। পরে ওই শিক্ষক তাকে অফিস কক্ষে যেতে বললে সে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, জানতে পেরেছি সে আবাসিক হলেও থাকে। সে হলে কাদের মাধ্যমে উঠেছে এটাও আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়টিকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে আমরা তার পরিবারের ঠিকানাও পেয়েছি। তার গ্রামে আমরা পুলিশ পাঠিয়ে শনাক্ত করবো। পাশাপাশি এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করবো।

আতিকুর রহমান/এমজেইউ