দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে যারা নতুন চাকরিতে ঢুকবেন তাদের জন্য পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা মানববন্ধন করছেন। তারই অংশ হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা।

রোববার (২৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে শহীদ মিনার চত্বরে পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, এ স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। এই স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও শিক্ষকদের জন্য চরম অমর্যাদাকর। শিক্ষকরা বর্তমান ও নতুন স্কিমের তুলনামূলক একটি চিত্র দেখিয়েছেন। বর্তমান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পেনশন স্কিমে প্রবেশ বাধ্যতামূলক নয়, কেবল নতুনদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারপরও আন্দোলনে নামছেন বর্তমান শিক্ষকরাই। তারা পেনশন স্কিম থেকে সব শিক্ষককে বাইরে রাখার দাবি জানাচ্ছেন।

শিক্ষকদের দাবি, একজন শিক্ষক সরাসরি উচ্চতর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এমনকি অভ্যন্তরীণ প্রার্থীও নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নতুন স্কিমের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন তারা। এছাড়া এককালীন টাকা, বোনাস ও পরিবারের সুরক্ষার অনেক জায়গায় বঞ্চিত হবেন তারা। পেনশন স্কিম চালু হলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলেও আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা।

মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম বলেন, আমরা তো শিক্ষক মানুষ, কম বুঝি হয়ত, তাই আমাদের ওপর পেনশন স্কিম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্কিমে কন্ট্রিবিউট করলে পাবে না হলে পেনশন পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে হেয় করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে। দেশে কোনো সমস্যা না থাকলে আমলারা সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশ যখন শান্তিতে চলে তখনই আমলারা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, সরকার যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে, সেক্ষেত্রে হলেও শিক্ষকদের দাবি মানা উচিত।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, পেনশন স্কিমের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন তারাই এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে সার্বজনীন কীভাবে হলো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জৌলুস নষ্ট করার জন্য, সরকারকে ভুল বোঝানোর জন্য এ স্কিম তৈরি করা হয়েছে। আত্মমর্যাদা টিকিয়ে রাখার জন্য শিক্ষক রাজনীতির কালার চয়েজ বাদ দিয়ে সব শিক্ষককে এক হতে হবে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মাশরিক হাসান বলেন, প্রত্যয় স্কিমে বয়সসীমা ৬০ বছর দেওয়া কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বয়সসীমা ৬৫ বছর, তাই এখানে একটি ধোঁয়াশা রয়েছে। তাছাড়া আমলারা নিজেরা এ স্কিমের আওতাভুক্ত না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংযুক্ত করে বড় বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। আমাদের দাবি মানা না হলে আগামী মঙ্গলবার দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের কর্মসূচি অনুযায়ী।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যে কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।

এমএল/এসএসএইচ