জীবনের নিরাপত্তা চান বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশীরা
সামাজিক অবমাননা ও কালচারাল র্যাগিংয়ের অভিযোগের তদন্ত এবং ক্যাম্পাসে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশী কয়েকজন শিক্ষার্থী।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন শিক্ষার্থী বুয়েট ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা এবং আগামী অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট, নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে করা আবেদনের সমাধান এবং তাদের বিরুদ্ধে হুমকিদাতাদের শাস্তির দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা আমরা প্রায়ই অনলাইন ও সরাসরি হেনস্তা ও অপমানের শিকার হয়েছি। সুনামগঞ্জে আটক ২৪ বুয়েট শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার নিয়ে আমাদের মানববন্ধনে দাঁড়ানোর কারণে ডেকে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়, নানাভাবে হল বা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ব্যাচ ও যার যার নিজ নিজ ব্যাচ এর ছাত্রদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হলে সিট বাতিল অথবা টার্ম বহিষ্কারের ভীতি প্রদর্শন করে। তাছাড়া অরিত্র ঘোষ এবং মিশু দত্তকে আনুমানিক সময় রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আহসান উল্লাহ হলের কমন রুমে এবং মাঠে জবাবদিহিতা চাওয়া হয় যা আমাদের অপমানের শামিল।
শিক্ষার্থীরা বলেন, রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বুয়েটে এসেছিলেন এমন বানোয়াট মিথ্যা বুয়েটের চলমান ছাত্রদের ফেসবুক গ্রুপে Anonymous post দিয়ে ভিত্তিহীনভাবে সবার সামনে আমাদেরকে অপরাধী বানানো হয়।
মৌলবাদী সংগঠনের কর্মীদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের মতো মৌলবাদী সংগঠন যে সক্রিয় তার অভিযোগ করেছিলাম। যার সত্যতা বুয়েটের সিসিটিভি ফুটেজ দেয়। সেই সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আপনার নিকট অনুরোধ জানাই।
টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তারদের সাথে একই ক্যাম্পাসে অবস্থান করা হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে তারা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে যারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত তাদের সাথে একই ক্যাম্পাসে একসাথে থাকা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি। জঙ্গীবাদের সিক্রেট গ্রুপে আমাদের নাম ও পরিচয় উন্মোচন আমাদের জন্য ভীতিকর এবং আমরা ধারণা করি আমাদের পরিচয় সেখানে উন্মোচিত করার সাথে অবশ্যই বুয়েটের কেউ যুক্ত। কে বা কারা এটা করছে এই বিষয়ে লক্ষ্যপাত করার অনুরোধ জানাই।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আন্দোলন শুরু করেন। পরে আবার ছাত্ররাজনীতি দাবিতে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করেন।
পরে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এই আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলতে কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানান আইনজীবীরা।
কেএইচ/পিএইচ