বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফেরার মাধ্যমে ‘অন্ধকার দিনগুলো’ যেন পুনরায় ফিরে না আসে সেজন্য চলমান সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আর্জি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পৌনে ৬টায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। 

লিখিত বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি, এবং কখনোই চাইবেনও না। তারা সবসময়ই আমাদের সব শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ আমরা আমাদের বুয়েটের সব শিক্ষকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি তারা যাতে এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বুয়েট উপাচার্যকে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভিসি স্যারের ওপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিন দিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সব ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করেন।’

হাইকোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। তবে বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের ওপর।’ এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সব ধরনের সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন।’

শিক্ষার্থীরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে ভুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‍্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়। যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল' ১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।’

বুয়েট এলামনাইরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি। দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রান্ত হতে আমাদের বুয়েটের এলামনাইরাও ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ  মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতেই ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আন্দোলন শুরু করেন।

কেএইচ/এমএ