ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব এবং সাড়া না পেয়ে একাডেমিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ফেসবুকে করা এক পোস্টের মাধ্যমে এমন অভিযোগ সামনে এসেছে। 

ওই ছাত্রীর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়, মধ্যরাতে চা খেতে যাওয়ার প্রস্তাব করেন শিক্ষক সাজন সাহা। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তাকে নিজ কক্ষে ডাকতেন। তবে সাড়া না পেয়ে রাগের বশবর্তী হয়ে একাডেমিক রেজাল্টে প্রভাব ফেলা শুরু করেন বলে অভিযোগ বিভাগটির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীর।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন সাহাকে শাস্তির আওতায় এনে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণসহ ৬ দফা দাবি জানান এবং উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। 

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমি উপাচার্য, প্রক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ই-মেইলে অভিযোগ পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় প্রশাসন যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থা না নেয় প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেব। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে কোনো নারী শিক্ষার্থী এ রকম হেনস্তার শিকার না হয়।

আন্দোলনকারী মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী জিনিয়া জাফরিন বলেন, আমরা আজকে শুধু আমাদের বান্ধবীর পক্ষে দাঁড়াইনি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মেয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। যেখানে আমার বান্ধবী নিরাপদ না সেখানে কোনো মেয়েই নিরাপদ না। আমরা এ ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, বিষয়টি শোনার পর আমি ওই ছাত্রীকে ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট তৈরির বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেই। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় আমি বিভাগে কয়েক দিন আসতে পারিনি। আমার কাছে শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব সবার আগে। অপরাধ করলে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ ধরনের ঘটনাকে বিব্রতকর বলে উল্লেখ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। আন্দোলনকারীদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। সে নিজেও উপস্থিত হয়নি। আমি তার সাথে কথা বলেছি আগামীকাল সে দেখা করবে। 

এদিকে ভুক্তভোগীর এমন পোস্টের পর আরও অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সাজন সাহার করা এমন কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়তে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে দেখা যায়, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছবি চাওয়া, রিকশা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ক্যাম্পাসের বাইরে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নিমন্ত্রণ, ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর ভিডিওর লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ। 

উবায়দুল হক/আরএআর