রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন শহীদ কামারুজ্জামান ভবনের একাংশ ধস ও শ্রমিক হতাহতের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, এ অভিযোগ করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত বাম সংগঠন।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব ক্ষয়ক্ষতির দায় নিশ্চিতভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের পরিবারের জন্যে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করে প্রদান করতে হবে। ভবন ধস ও ধারাবাহিক ছাত্র-শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‌‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন’ এর নামে মামলা এবং শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভবন ধস ও শ্রমিক হতাহতের ঘটনা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নয়। ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর একই ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক ইউনুস আলী, ২০২২ সালের ৩১ মে আরেক নির্মাণাধীন ২০তলা অ্যাকাডেমিক ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক সাগর এবং ২ ফেব্রুয়ারি ভবনের নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী ট্রাকের চাপায় শিক্ষার্থী হিমেল হত্যাকাণ্ডের মতো ধারাবাহিক ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষয়ক্ষতির আভাসই দিয়ে আসছিল। অথচ লাগাতার ‘হত্যাকাণ্ডের’ পরেও প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে অবহেলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন’ এর বেপরোয়া দুর্নীতি, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি ‘হত্যা কাঠামো’ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে।

নির্মাণাধীন ভবনের কাঠামোটি নিরাপদ নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবনটির ধসে পড়া অংশে একটি পিলার হেলে গেছে। এই ঘটনায় ভবনের বাকি কাঠামোর স্থায়িত্ব, রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর উপযুক্ততা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। অনিরাপদ কাঠামো ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা বয়ে আনবে। তাই নতুন করে কাজ শুরু করার আগে অবিলম্বে নিরপেক্ষ প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ দিয়ে ভবনটির মান যাচাই করতে হবে।

বক্তারা এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে উল্লেখ করেন, কৃষক শ্রমিক গণমানুষের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের এমন চরম অনিরাপত্তার নজির লজ্জাজনক। এই পরিবেশে শিক্ষার্থীরাও যে নিরাপদ নয়, হিমেল হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ। এমন অনিরাপদ পরিবেশ দীর্ঘায়িত হতে থাকলে আরও ভয়াবহ হতাহতের মুখোমুখি হবো আমরা। তাই নিজেদের এবং সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বাবলু চাকমা ও ছাত্র গণমঞ্চের সমন্বয়ক নাসিম সরকার।

জুবায়ের জিসান/এএএ