ছবি: আহত সামাদ আকন্দ ও অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। খাবারের দোকানে হাত ধোয়ার পর হাত থেকে কয়েক ফোটা পানি তরকারিতে পড়ায় তাদের দুজনকে কিল-ঘুষি মেরে আহত করেন ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি গেটের একটি খাবার দোকানে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী সামাদ আকন্দ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হিরণ তালুকদার। তারা উভয়েই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। 

ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, মিউজিক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাকিবুল সুজন। তিনি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ এবং উন্নয়ন উপ সম্পাদক এবং বর্তমানে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতা। অন্যজন হলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মেহেদী হাসান রায়হান। তিনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের ছাত্র বৃত্তি সম্পাদক। 

এ ঘটনায় আহত সামাদ আকন্দ নিজেদেরকে ভুক্তভোগী হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে ফোনে অভিযোগ করেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগপত্রের কপি জমা দেন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে সামাদ ও হিরণ খাবার খেতে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটে যান। এসময় সামাদ হাত ধুয়ে খাবার নিতে গেলে তার হাত থেকে কয়েক ফোটা পানি তরকারিতে পড়ে। এসময় দূরে খাবার খেতে থাকা সুজন জিজ্ঞেস করেন- ‘কেন তিনি টিস্যু দিয়ে হাত না মুছে হাতের পানি তরকারিতে ফেললেন’? এসময় তার সাথে মেহেদী হাসান রায়হানও ছিলেন।

এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা। এসময় সুজন ও মেহেদীর আঘাতে সামাদের শার্টের বোতাম ছিড়ে যায় এবং গলার কাছে ও মুখে আঘাত পান সামাদ। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাদ আকন্দ বলেন, আমি এবং আমার বন্ধু হিরণ আজ দুপুরের খাবার খেতে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেইটে যাই। এসময় আমরা বেসিনে হাত ধুয়ে খাবার নেওয়ার সময় এক ফোটা পানি আমার অজান্তেই দোকানে রাখা খাবারের পাত্রে পড়ে। তখন দূরে খেতে থাকা সাকিবুল শান্ত ও মেহেদী হাসান রায়হান এসে আমাকে বাজে ভাষায় তুই-তোকারি করে বকতে শুরু করে। আমরা তাদের সিনিয়র হিসেবে পরিচয় দিলেও তারা আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের গায়ে হাত তোলে। এক পর্যায়ে আমরা যখন বের হয়ে আসতে চাই তখন তারা ৫-৬ জন সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের উপর হামলা করে। এতে আমার মুখে স্পষ্টভাবে জখমের চিহ্ন বর্তমান এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানিয়েছি। স্যারের হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। স্যার ব্যস্ত থাকায় সরাসরি দেখা করতে পারিনি। তাছাড়া আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ভাইকেও বিস্তারিত জানিয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদান করব।

অভিযুক্ত মেহেদী হাসান রায়হান বলেন, ঘটনার সময় আমরা ভাত খাচ্ছিলাম। এসময় সামাদ ভাই হাত ধুয়ে টিস্যু দিয়ে না মুছে হাত ঝাড়তে থাকলে হাতের পানি তরকারিতে পড়ে। এটা নিয়ে আমার বন্ধু সুজন তাকে ভালোভাবে বললে তিনি আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শুরু করেন। তাকে (সামাদ) বলার আমরা কে, কেন তার উপর কথা বলছি এজন্য আমাদের বকতে থাকেন। একসময় তিনিই প্রথম সুজনের উপর আঘাত করেন। এতে আমাদের কপাল ও হাত ছিলে যায়। 

তিনি আরও বলেন, তারাই প্রথম আমাদেরকে হিট করে স্যারের সাথে দেখা করে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরাও সৈকত ভাইয়ের সাথে কথা বলে প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা করব এবং আমাদের অভিযোগ তুলে ধরব।

তবে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ এবং উন্নয়ন উপ সম্পাদক ও হলের পদ প্রত্যাশী নেতা সাকিবুল সুজনকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। সুজনরা ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে, বাকি দুজনও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ছিলেন। তারা প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হাতাহাতি হোক। তাই, আমরা প্রক্টর স্যারের সাথে অভিযোগের বিষয় নিয়ে কথা বলব, ঐ জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সত্যতা যাচাই করে এর সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করব। 

এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা আগামী রোববার বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে বসব এবং দুপক্ষের কথা শুনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব। 

কেএইচ/পিএইচ