ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের দীর্ঘদিনের আবাসন সংকটের স্থায়ী সমাধানে ফের আন্দোলনে নেমেছেন হলের শতাধিক শিক্ষার্থী। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটরদের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন বলেও জানা যায়। 

তবে আন্দোলনের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন জানতে না পারেন সেজন্য হলের মূল গেটে তালা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে হলের ভেতরে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯টার দিকে বঙ্গমাতা ও মৈত্রী হলের বাইরের মূল গেটের ভেতরে ও হল গেটের বাইরের রাস্তায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে আন্দোলনের বিষয়ে জানতে মৈত্রী হলে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুন নাহার ও কয়েকজন হাউস টিউটর এই নির্দেশ দেন বলে জানান হলের গেটম্যান বেনজীর আহমেদ। 

এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে হলের সিট সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সে সময় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সিট সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে সম্প্রতি ভূমিকম্প হওয়ার পর হলের মনোয়ারা ভবন থেকে ছাত্রীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু করে হল প্রশাসন। হলের প্রধান ভবনের ছয় জনের রুমে ৭-৮ জন করে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে হলের আবাসিক ছাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নুসরাত ইমরোজ বলেন, হলে সিট সংকট অনেক। রিডিং রুমে পড়ার জন্য জায়গা পাওয়া যায় না। আলাদা কোনো রান্নাঘর না থাকায় রুমেই আমাদের রান্না করতে হয়। রুমেই পড়াশোনা করতে হয়। এজন্য আমরা কিছুদিন আগে দাবি তুলেছিলাম একরুমে ছয়জনের বেশি থাকবে না। সেই দাবি তখন মেনে নিলেও এখন আবার শীতকালীন ছুটির সুযোগে প্রতিটি রুমে রুমে একজন করে ছাত্রীকে সিট দেওয়া হচ্ছে। এজন্য যখন আমরা হল প্রশাসনের কাছে সিটের বিষয়ে কথা বলতে এসেছি তখন তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। সিট কেটে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে।  

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার বলেন, মাত্র দুমাস আগে আমায় সিঙ্গেল সিট দেওয়া হয়েছিল। এখন আমার সঙ্গে আবারো ডাবলিং করতে বলে অন্য এক ছাত্রীকে সিট দিয়েছে। এটা নিয়ে ম্যামদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা আমার গার্ডিয়ানকে ফোন দেওয়ার হুমকি দেয়। সিট কেটে দেওয়ার হুমকি দেয়। উপাচার্য স্যারের নির্দেশ বলে আমাকে ডাবলিং করে থালতে বলে। না হলে সিট কেটে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমাদেরকে এক রুমে ৭-৮ জন করে রেখে হলের প্রতিটি রুমকে মিনি গণরুম হিসেবে বানানো হয়েছে। আমরা কেউ শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না। 

এদিকে রাত পৌনে এগারোটার দিকে হলে প্রবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান। তবে তাকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

অন্যদিকে হল প্রাধ্যক্ষকে ফোন দেওয়া হলে তিনি প্রক্টরের উপস্থিতির কথা বলে হলে গেটের ভেতরে ঢুকার অনুমতি দেননি। 

রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৫ মিনিটের অধিক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ৪-৫ জন হাউস টিউটর শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা মানি না মানবো না বলে স্লোগান দিতে থাকেন, যা হলের মূল গেটের বাইরে থেকেও শোনা যায়। 

এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ভূমিকম্পের পরে আমি নিজে হল পরিদর্শনে গিয়েছি।  ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে ছাত্রীদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এর একটি সুন্দর সমাধান করা হবে।

কেএইচ/এমএসএ