গত বছরের ২০ ডিসেম্বর রাতে গণভবন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ঢাবির আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সভাপতি হিসেবে মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তানভীর হাসান সৈকতের নাম ঘোষণা করা হয়। শয়ন ও সৈকতের নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ আজ (২০ ডিসেম্বর) এক বছর পূর্ণ হলেও এখনো আলোর দেখা পায়নি কমিটির ’পূর্ণাঙ্গ রূপ’।

ঢাবি শাখা কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার আগে নিজেরাই মেয়াদোত্তীর্ণ বনে গেলেন ঢাবি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। এছাড়া পদ পাওয়ার আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেন পদপ্রত্যাশী নেতারাও।  

তবে, নির্বাচনকালীন কিছু কৌশলগত কারণে কমিটি দিতে বিলম্ব হচ্ছে এবং নির্বাচনে নেতাকর্মীদের ‘পারফরমেন্স পুরস্কার স্বরূপ’ নির্বাচনের ঠিক পরপরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে নেতাকর্মীদের পদায়ন করা হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। 

এদিকে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় আসে ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রসঙ্গ। দীর্ঘ এক বছর হয়ে গেলেও কমিটির পূর্ণাঙ্গরূপ না আসায় এ নিয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত থাকায় এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। 

তবে এর আগে বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের আশার বাণী শুনিয়েছিলেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তে সেপ্টেম্বরে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া এক বক্তব্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার অপেক্ষায় ঢাবি ছাত্রলীগ’ বলে জানিয়েছিলেন এই দুই নেতা। তারা বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির যাবতীয় কাজ, যাচাই-বাছাই সমাপ্ত হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় কমিটির ঘোষণা দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’

এছাড়া জুলাই কিংবা সেপ্টেম্বর মাসেই কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ আসবে বলে একাধিক গণমাধ্যমকে তারা জানালেও এখনো কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ হয়নি। তবে নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও মাঠে তৎপর রাখতেই এখনো কমিটি হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে কমিটি দিলে পদবঞ্চিত নেতারা সক্রিয় থাকবে না ভেবেই এখনো কমিটি হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে।

এর আগে, গত জুন মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য নির্দেশনা দেন। তখন ঢাবির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) জমা নেয় ঢাবি ছাত্রলীগ, কিন্তু তখন সেটার ফলাফলও বরফের নিচে চাপা রয়েছে। 

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাংগঠনিকভাবে ঢাবি শাখার মর্যাদা জেলা পর্যায়ের। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর’। সেই হিসেবে আজ ২০ ডিসেম্বর শেষ হবে শয়ন-সৈকতের নেতৃত্বে বর্তমান কমিটির মেয়াদ।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন পদপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কমিটির পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করে চলছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। তবে বারবার নেতাকর্মীদের হতাশ করে পদ দিতে বিলম্ব করছেন শীর্ষ দুই নেতা। এখন নির্বাচনের সময় কেউ যেন অলসতা না করে তাদের মনমতো কাজ করতে পারে এবং সংগঠনকে আরও গতিশীল রাখতে পারে সেজন্য নির্বাচনের পরে কমিটি দেওয়ার চিন্তা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাজহারুল কবির শয়ন গ্রুপের এক পদপ্রত্যাশী নেতা বলেন, এক বছরের মধ্যে কমিটি দেওয়ার কথা থাকলেও নেতারা সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাদেরই মেয়াদ নেই, কিন্তু ঠিকই নির্বাচনের পরে আমাদের কমিটি ঘোষণা করবে। আমরা না ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিতে পারছি, না দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতির দিকে। আবার পদ না পেলেও দীর্ঘদিনের পরিশ্রম বৃথা যাবে।

তানভীর হাসান সৈকত গ্রুপের এক অনুসারী বলেন, নেতারা মনে করেন আমরা নির্বাচন কেন্দ্রিক ব্যস্ততায়, কিন্তু সেটা ভুল। পদপ্রার্থী নেতারা অধিকাংশই হতাশায় নিমজ্জিত। আমরা একটা পদের জন্য দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছি, কিন্তু সেটা বারবার পেছানো হচ্ছে। আমরা শুনতে বাধ্য, তাই তারা নিজেদের মতো করেই সবকিছু আগে-পিছে করছে। দল নিয়ে নেতাদের যতটা চিন্তা, নেতাকর্মীদের নিয়ে ততটা চিন্তা নেই।

ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কার্যক্রম শেষ করেছি। বেশ কয়েকবার কমিটি দেওয়ার চেষ্টাও করেছি। তবে বর্তমানে নির্বাচন কেন্দ্রিক কিছু কৌশলগত কারণে নির্বাচনের পরে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেবো। আমরা মনে করি, নেতাকর্মীদের নির্বাচনকালীন ‘পারফমেন্সের পুরস্কার স্বরূপ’ তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করে পদায়ন করা হবে।

পদপ্রার্থী নেতাকর্মীরা হতাশায় নিমজ্জিত কি-না জানতে চাইলে সৈকত বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা পদ না পেয়ে হতাশ হয় না, হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। রাজনীতি হলো একটি ‘লং রান রেস'-এর মতো। এখানে হতাশার কোনো জায়গা নেই। যারা ভালো কাজ করবে, সক্রিয় থাকবে তারাই পদ পাবে।

দেরিতে কমিটি ঘোষণা ক্যারিয়ার হুমকিতে ফেলবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পদ পাওয়া না পাওয়ার সঙ্গে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কেউ বিসিএস দিতে চাইলে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। অনেকে পদ পেয়েও বিসিএস দিচ্ছে আবার অনেকে পদ না পেয়েও বিসিএস দিচ্ছে। তবে আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রেখেছি তারা যেনো নির্বাচনের পরে নিজেদের কাজের মূল্যায়নটুকু পায় এবং আমরা তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এক বছরের মধ্যেই ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশনা ছিল কি-না জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এক নম্বর ইউনিট। আমাদের নির্দেশনা হলো সংগঠনকে গতিশীল রাখতে ইউনিটগুলো যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে আমরা আশা করি ঢাবি শাখা অতি দ্রুতই তাদের কমিটির পূর্ণাঙ্গরূপ ঘোষণা করবে।

কেএইচ/এসএম