বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই সময়ে মানবজাতিসহ গৃহপালিত প্রাণীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে বৈরী আবহাওয়ায় ধান, গম, আলুর উৎপাদন কমছে, অপরদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। এমতাবস্থায় চাল ও আলুর উপর নির্ভরতা কমাতে পারে কাসাভা। এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা জাতীয় খাদ্য এবং প্রায় ৮০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য। এটি বাংলাদেশে শিমুল আলু হিসেবে পরিচিত।

হেক্টরপ্রতি এই আলুর গড় ফলন ৩৫ থেকে ৫০ টন, যেখানে ধানের গড় ফলন ২ থেকে ৩ টন। আর পাতার ফলন হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৫ টন। এ ফসল চাষে মাটির ক্ষয় হয় বলে মূলত বাড়ির পাশের পতিত জমি ও পড়ে থাকা উঁচু জমি চাষের জন্য উপযুক্ত। এটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম উর্বর মাটিতেও জন্মাতে সক্ষম। তবে মানুষ ও প্রাণীর জন্য এ খাবার সর্বাবস্থায় সিদ্ধ করে খেতে হবে।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব এবং মাটির অনুর্বরতা বিবেচনায় দেশের মানুষের শর্করার চাহিদা মেটাতে, বাংলাদেশে এ ফসলের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কাসাভা থেকে চিপস, কেক, হালুয়া, রুটি, সিদ্ধ কাসাভা আলু, তেলপিঠা, পশুখাদ্যসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারও তৈরি করেছেন। যা ভাত ও রুটির বিকল্প হবে বলে জানান তিনি।

সম্মেলনে গবেষক ছোলায়মান আলী ফকির জানান, কাসাভা সিদ্ধ করে, পুড়িয়ে এমনকি গোল আলুর মতো অন্যান্য তরকারির সঙ্গেও রান্না করে খাওয়া যায়। কাসাভা আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পরোটা, কেক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। আমেরিকার দেশ হাইতি, মেক্সিকান রিপাবলিক, প্যারাগুয়ে, পেরু; আফ্রিকার তানজানিয়া, কেনিয়া, জাম্বিয়া, ঘানা ও নাইজেরিয়া এবং এশিয়ার ভিয়েতনাম, ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যে এবং ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে এই আলু স্যুপ, চিপস, ট্যাপিওকা (সাগুসদৃশ খাবার), পুডিং ইত্যাদি হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়া কাসাভার পাতার প্রক্রিয়াজাতকরণের পর উদ্ভাবিত পিলেট এবং আটা গরু, ছাগল, মহিষ, মাছ এবং পোলট্রিকে খাবার হিসেবে দেওয়া যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শর্করা, ০.৮ থেকে ২.৭০ শতাংশ আমিষ, ০.৫ থেকে ১.২ শতাংশ চর্বি, ০.৮ থেকে ২.৫ শতাংশ আঁশ, ০.৩ থেকে ২.৬ শতাংশ খনিজ দ্রব্য পাওয়া যায়। এছাড়া এতে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি ও স্বল্প পরিমাণ লৌহ উপাদানও থাকে। কাসাভার পাতায় ড্রাইম্যাটার (রোদে শুকানোর পরে অবশিষ্ট অংশ) থাকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, আমিষ থাকে শুকনো ওজনের ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ। এই গাছের পাতা, কাণ্ড এবং মূল সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য। এছাড়া পাতায় কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও লৌহ উপাদানও থাকে।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মে চাষ করে হেক্টরপ্রতি ৫০ টন ফলন পাওয়া গেছে। বীজ ও শাখা কাটিংয়ের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার গাছ লাগানো যায়। গাছ লাগানোর ৭ থেকে ১০ মাস পর আলু উত্তোলনের উপযোগী হয়। আলু তোলার ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে অন্যথায় পচন ধরতে শুরু করবে।

পাশাপাশি, কাসাভা গাছের সর্বত্র বিষাক্ত সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড থাকে। তাই বিষাক্ত কিছু জাতের কাসাভার ডগা এবং পাতা খেয়ে গরু/ছাগল মারা যেতে পারে। তবে সিদ্ধ বা প্রক্রিয়াজাত করলে এই বিষক্রিয়া আর থাকে না। তাই কাসাভা আটা/স্টার্চ সম্পূর্ণ নিরাপদ। আলু উত্তোলনে মাটি ক্ষয় হওয়ার কারণে ফসলি জমিতে চাষ না করাই উত্তম। এজন্য বড় পরিসরে ব্যাণিজিকভাবে এর চাষ না করে মাঝারি বা ছোট পরিসরে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এমজেইউ