নিরাপত্তাহীনতায় ঢাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন
সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ এবং দুপুর ২টায় পরীক্ষা বর্জন করেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
তাদের সমর্থনে আগামীকাল (সোমবার) সকাল ৯টায় বিভাগের প্রথম বর্ষ এবং দুপুর ২টায় পরীক্ষা বর্জনের কথা ভাবছেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
তবে, বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার পরীক্ষা নিতে অনড় থাকায় ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়েই আজ (রোববার) পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া, আগামীকালও (সোমবার) শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় না বসলে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়েই পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে ঘোষণা দেন বিভাগের চেয়ারম্যান।
ইতিহাস বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ফলে রাজধানীসহ দেশের সব জায়গায় যান চলাচল স্তিমিত রয়েছে। চলমান লাগাতার অবরোধের মধ্যে গতকাল (শনিবার) রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বাসে আগুন লাগানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ব্যাচের ১৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী যাদের মধ্যে মোটামুটি ৪০-৫০ জন হলের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় থাকে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তারা পরীক্ষা দিতে অপরাগতা জানালে আমরা চেয়ারম্যান স্যারের সাথে সরাসরি কথা বলি। কিন্তু চেয়ারম্যান স্যার পরীক্ষা নিতে অনড় থাকায় যারা বাইরে থাকে তাদের সমর্থনে আমরা পরীক্ষা বয়কট করেছি।
দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমানে পরিবার নিয়ে মিরপুরে থাকি। কিছুদিন ধরে অবরোধের পাশাপাশি গার্মেন্টস কর্মীদের আন্দোলনে আমাদের বেশ ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ অবস্থায় বাসা থেকে বের হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। আমার মতো অনেকেই আরও অনেক দূরে থাকে। এমন পরিস্থিতিতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম এক প্রকার জোর করেই চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, এ ব্যাপারে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে যান শিক্ষার্থীরা। তখন বিভাগীয় চেয়ারম্যান বলেন, বিভাগের শিক্ষকরা অনেক দূর থেকে পরীক্ষার ডিউটিতে আসছেন, তাই পরীক্ষা দিতে কারো কোনো সমস্যা থাকার কথা না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বাস চলছে, সুতরাং এখানে অজুহাতের কিছু নেই।
এছাড়া, বিভাগের চেয়ারম্যান পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের চিঠি পাঠাবেন বলেও জানা যায়। তাছাড়া পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থীদের রেজাল্টে ফেল এলে মুচলেকা দিয়ে আবার রিঅ্যাড নিতে হবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভাগ কোনো দায়ভার নেবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিভাগের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. ঈশানী চক্রবর্তী বলেন, আমাকে সকালে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে তারা চলমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেবে না। আমি তাদের বলেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে সুতরাং সঠিক সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা চেয়ারম্যান যদি পরীক্ষা পেছানোর নির্দেশ দেন তাহলে পেছাতে পারে, অন্যথায় নয়। এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশিকিছু আমার জানা নেই।
তবে সার্বিক বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
কেএইচ/কেএ