সারা দেশে টানা তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে সারাদেশে অবরোধ চলাকালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারকরা। কিন্তু এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অবরোধের মাঝেও দূর-দূরান্ত থেকে এসে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন অনেকেই। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে ক্লাস করতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। 

তবে অবরোধ চললেও ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাস নিয়মিত চলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার-২ কামরুল হাসান।

এদিকে, আজ সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তঃরুটের একটি বাস (ক্ষণিকা) রাজধানীর বনানীর কাছাকাছি পৌঁছালে বাসটির কয়েকশ’ গজ দূরে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে করে বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় অনেকেই বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ভয়ে চিৎকার শুরু করেন। পরে ক্যাম্পাসে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাইরে থেকে ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের মনে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কি না, তা নিয়েও আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া, সোমবার (৩০ অক্টোবর) ৯টা ২৫ মিনিটে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈতালি বাস মিরপুরের প্রশিকা মোড় পৌঁছালে বাসটিকে সরকারি বিআরটিসি বাস ভেবে হামলা চালায় গার্মেন্টস কর্মীরা। এসময় বাসের ভেতরে ইটের টুকরো ছোড়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বুঝতে পেরে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

 

বনানীর ককটেল বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে ঢাবির বায়োক্যামিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাফিল আহমেদ বলেন, আমাদের বহনকারী ক্ষণিকা বাস যখন বনানীর কাছে পৌঁছায়, তখন অনেক গাড়ি মিছিলের কারণে ফিরে যাচ্ছিল। এসময় একজন পুলিশ সদস্য আমাদের ধীরে চলতে বলেন। হঠাৎ আমাদের বাস থেকে কয়েকশ’ গজ দূরেই একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে সবাই ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। 

তিনি বলেন, অনেকে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ভেবে নেয়। অবরোধ চলাকালে এত ভয়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে আসাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আজ আমরা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু আগামীকাল কী হবে আমরা কেউ জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা বা বিকল্প অবস্থায় ক্লাস চলমান রাখা।

ঢাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আকিবুল ইসলাম আকিব বলেন, সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে সবাই আতঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে অনাগ্রহী হচ্ছে। পরশু (রোববার) টঙ্গীতে একটি বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আজও (মঙ্গলবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এত ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এত দূর দূরান্ত থেকে আসা-যাওয়া অনেক কষ্টকর। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিষয়টি আরেকবার বিবেচনা করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার-২ কামরুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আজ অবরোধের মধ্যেও আমাদের সব বাস চলছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নির্ধারিত সব রুটেই আমাদের বাসগুলো চলবে। পরবর্তী নির্দেশনা কী হতে পারে সেটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সেশন জটে ফেলতে চাই না। ২০১০ সাল থেকে হরতাল অবরোধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল বিধায় শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে পেরেছিলাম। করোনার মধ্যেও আমরা লস রিকভারি প্ল্যান করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছি, যেন শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধ দিলো আর তা দেখে আমরা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেব... এমনটা হলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তি বাড়বে। 

শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে করা যায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বর্তমান পরিস্থিতি বেশি খারাপ নয়। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় তাহলে আমরা আবার অনলাইন ক্লাসের দিকে মনোযোগ দিব। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে তারা যেন সর্বদা সতর্ক থাকে এবং নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবে। 

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারাই দলগুলো পরিচালনা করবে এবং দেশও তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। তাই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসকে বা শিক্ষার্থীদের টার্গেট না করেন। আমরা আশা করব তারা যেন শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

কেএইচ/কেএ