মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এমটিএফই) ইনকরপোরেটেড প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অন্তত ২০ লাখ টাকা হারিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একজন শিক্ষকসহ আরও ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা। মুনাফা লাভের আশায় একজন সহকারী অধ্যাপকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমটিএফই ট্রেড নামের মুঠোফোন অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হন তারা। 

এমটিএফই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের নাম অধ্যাপক স্বরূপ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার কথাতে প্রভাবিত হয়ে সবাই টাকা খুইয়েছেন বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী।

অন্যদিকে, টাকা খোয়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে স্বরূপ হোসেনের সহকর্মী সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. এনামুল হক, তিনজন সংগীত বিভাগের চলমান শিক্ষার্থী, কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী, কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বাকিরা তাদের পরিচিত বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবি শিক্ষক স্বরূপ হোসেনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে যারা এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ‘এমটিএফই টাল গ্রুপ’ নামে একটি গ্রুপ ছিল। সেই গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন স্বরূপ হোসাইন। যদিও গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে টাকা গচ্চা গেলে সুযোগ বুঝে গ্রুপ থেকে বের হয়ে যান তিনি। এমনকি টাকা হারানোর পরদিন রাতে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন এই শিক্ষক। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন স্বরূপ হোসেন। 

অধ্যাপক স্বরূপ হোসেন (ছবি : সংগৃহীত)

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, স্বরূপ হোসেন স্যার প্রথমে এমটিএফই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তিনি আমাদের প্রতিদিন দেখাতেন কীভাবে ডলারে মুনাফা আসছে। তার নিয়মিত মুনাফা দেখে প্রায় তিন মাস আগে আমরা তার মাধ্যমে এমটিএফইতে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা বিনিয়োগ করি। অন্যদের সঙ্গে সংগীত বিভাগের আরও তিন শিক্ষার্থী ২৬ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করেন। প্রথম দিকে এমটিএফই অ্যাপে ডলারের ব্যালেন্স পজিটিভ ছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্ট খোলার প্রায় ১৫ দিন পর আমাদের ডলারের ব্যালেন্স নেগেটিভ দেখায়। তখন স্বরূপ হোসেনের মাধ্যমে জানতে পারি যে আমরা লোকসানে পড়েছি। 

তিনি বলেন, এমটিএফই অ্যাপে দেখানো মাইনাস ডলার পরিশোধ না করলে উকিল নোটিশসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা জানানো হয়। পরে আমরা অ্যাপটি ফোন থেকে ডিলিট করে দেই। ফলে আমরা কোনো মুনাফা পাওয়া তো দূরের কথা বরং আমাদের সবার বিনিয়োগ করা প্রায় ১৮-২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

অন্য একজন ভুক্তভোগী বলেন, স্বরূপ হোসেন সংগীত বিভাগের সদ্য সাবেক এক ছাত্রের মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে বিনিয়োগের টাকা নিতেন। পরে সেই টাকা তার পরিচিত এক ব্যাংক কর্মকর্তার মাধ্যমে ডলারে রূপান্তর করে আমাদের এমটিএফই অ্যাকাউন্টে জমা করে দিতেন। তাছাড়া তিনি আমাদের বুঝাতেন এমটিএফই বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত। ঢাবি শিক্ষক হিসেবে তার প্রতি আস্থা রেখে আমরা সবাই সেখানে বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন আমরা লোকসানে পড়েছি। কিন্তু টাকা ফেরত পাব কি না এ বিষয়ে স্বরূপ হোসেন স্যার কিছু বলছেন না। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে জেনেও তিনি কিছুই বলছেন না।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সহকারী অধ্যাপক মো. এনামুল হক টাকা খোয়ানোর ব্যাপারটি স্বীকার করলেও মুঠোফোনে বিস্তারিত জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। 

এ ব্যাপারে সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বরূপ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অন্য একজনের মাধ্যমে এমটিএফইতে বিনিয়োগ করার বিষয়টি জেনে ডলারের মাধ্যমে বিটকয়েন কিনে বিনিয়োগ করেছি। দেশের ১০ লাখ মানুষ এখানে বিনিয়োগ করেছে, তারাও কারো না কারো মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে টাকা বিনিয়োগ করেছে। আমি তো তাদেরকে ইনফ্লুয়েন্স করিনি বা জোর করে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলিনি। 

হোয়াটসঅ্যাপের এমটিএফই টাল গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে থাকা নিয়ে তিনি বলেন, দেখুন আমি স্বীকার করি সেই গ্রুপে আমি ছিলাম, কিন্তু আমি তো গ্রুপটি খুলিনি। আমি সেখানে টাকা বিনিয়োগ করায় আমাকে সেই গ্রুপে অ্যাড করা হয়েছে। ফয়সাল নামের একজন গ্রুপ খুলে আমাকে অ্যাডমিন করে দিয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এখানে অভিযুক্ত কেউ হলে সেটি গ্রুপ ক্রিয়েটর হবে, আমি না।

উল্লেখ্য, এমটিএফই কানাডা ও দুবাইভিত্তিক অনলাইনে শেয়ার, ডলার, ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচার প্রতিষ্ঠান। ভার্চ্যুয়াল পঞ্জি স্কিম ও বহুস্তর বিপণন (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম) মডেলেও কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ‘এমটিএফই ট্রেড’ নামের একটি অ্যাপে শুধু মুঠোফোন নম্বর দিয়েই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা ও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন নিষিদ্ধ। সম্প্রতি বাংলাদেশে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এমটিএফই। 

কেএইচ/কেএ