ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে এবং সুস্থ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন। এজন্য বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে ‘আপত্তিকর অবস্থা’ দূর করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার সুফল মিলতে শুরু করলেও সম্প্রতি ক্যাম্পাস এলাকার একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফের নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের তথ্য বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গত চার মাসে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ ৩১৩ প্রেমিক যুগলকে আটক কর হয়। পরে মৌখিক মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। যাদের মুচলেকা নেওয়া হয় পরবর্তীতে তাদের কাউকে আর অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন >> জবির বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে ৮ আগস্ট রাতে ঢাবিতে ‘অপ্রীতিকর অবস্থায় ছয় তরুণ-তরুণী আটক’ শিরোনামে একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে প্রক্টরিয়াল টিমের তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হাসান ফারুক।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, ফুলার রোড, বটতলা ও আমতলায় সন্ধ্যার পর স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। সহকারী প্রক্টররাও বিষয়টি তদারকি করছেন। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ, ক্যাম্পাসে রাতে অবস্থান নিষিদ্ধ, ক্লাসপরবর্তী সময়ে অ্যাকাডেমিক ভবনের সিঁড়ি বা বারান্দায় দাঁড়ানো বা বসা নিষেধসহ বিভিন্ন বিষয় বোঝানো হচ্ছে। সপ্তাহে অন্তত চারদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

কিছুদিন আগে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের প্রবেশ, সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়া, সিঁড়ি বা বারান্দায় বসা বা অবস্থান নেওয়া নিষেধ— মর্মে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে উঠে যেতে বলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে এবং ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্রতিটি মোড় ও অ্যাকাডেমিক ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে ছোট ছোট অনেকগুলো নোটিশ বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে কার্জন হলের প্রবেশ মুখে দেখা যায় বড় আকারের একটি নোটিশ বোর্ড। এতে লেখা রয়েছে, এলাকাটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীন। কার্জন হল এলাকায় বহিরাগত ও সাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত। কার্জন হল এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান সম্পূর্ণ নিষেধ। অ্যাকাডেমিক ভবনে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ছাড়া অবস্থান করা নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার-সম্বলিত যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত।

এদিকে, ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের উদ্যোগে কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও কার্জন হল এলাকায় ঘুরতে যাওয়া ছিল অনেক কষ্টকর। আশেপাশের বারান্দায় তাকালেই নানা আপত্তিকর দৃশ্য চোখে পড়ত। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ছিল অসম্ভব। কিন্তু প্রক্টরিয়াল টিম সম্প্রতি তাদের কর্মতৎপরতা বাড়ানোয় পরিবেশ কিছুটা অনুকূলে এসেছে। তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও প্রশান্তিদায়ক হবে।

আরও পড়ুন >> অডিট আপত্তি উপেক্ষা করেই ৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির চেষ্টা

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হেলালুর রহমান বলেন, আমরা শুনেছি একসময় ক্যাম্পাসের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম ছিল। অশ্লীলতার ছিটেফোঁটাও ছিল না। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, পরিবার নিয়ে ঘোরা তো দূরের কথা, একা হাঁটতেও লজ্জা লাগে। সন্ধ্যার পর রাস্তা থেকে একটু সাইডে তাকালেই প্রেমিক যুগলদের অশালীন কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে। শুনেছি প্রশাসন এসব নির্মূলে কাজ করছে, কিন্তু যথেষ্ট নয়। আরও তদারকির প্রয়োজন। এখন শুধু কার্জন হল এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে, এটি কলাভবন, বটতলা ও আমতলায় নিয়মিত পরিচালনা করা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হাসান ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মোটামুটি চার/পাঁচ মাস ধরে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। আগে নোটিশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা রাতে ক্যাম্পাসে না থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলত। তারা বিষয়টি ‘জানে না’ বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করত। পরে আমরা প্রক্টর ও ভিসি স্যারের নির্দেশে নোটিশ বোর্ড স্থাপন করি। এ ছাড়া আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অপ্রীতিকর অবস্থায় অনেককে আটক করি। বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোতে আলোচিত হলে রাতে কার্জন হল এলাকায় কাপল সংখ্যা তুলনামূলক কমে যায়।

‘কিছুদিন আগে কার্জন হল এলাকার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় আমরা আরও সতর্কতা অবলম্বন করি। বর্তমানে আমরা সপ্তাহে তিন/চারদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করছি। গত চার মাসে ৩১৩ প্রেমিক যুগলের মৌখিক মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। অনেককে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। আশা করি, সবার সহযোগিতায় ঢাবি ক্যাম্পাস একটি সুন্দর পরিবেশ পাবে।’

সার্বিক বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বসে আড্ডা দেবে, গল্প করবে, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সমাবেশ করবে। ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক সবার জন্য, যেখানে সুন্দর ও পরিশীলিত পরিবেশ থাকবে। অসামাজিক কার্যক্রম এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অশালীন কাজকর্ম করার কোনো সুযোগ নেই। এটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে না, করবেও না।’

জেডএস