দেশে শক্তিশালী ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেকোনো সময়ে ঘটে যেতে পারে প্রকৃতির এ ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১০টি ভূমিকম্প হয়েছে দেশে। একের পর এক ছোট থেকে মাঝারি আকারের ভূমিকম্প হওয়ার পরও যেন টনক নড়ছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। 

গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রশাসন বরাবর চিঠি দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। চিঠি পাওয়ার প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ভবনগুলোই চিহ্নিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রশাসনের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে রেট্রোফিটিং করে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। এতে ভবনগুলো মজবুত হবে এবং স্থায়িত্ব বাড়বে।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবন, কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের ভবনগুলোর কোথাও দেখা যাচ্ছে ফাটল, কোথাও খসে পড়ছে ইট ও পলেস্তারা। বড় বড় ফাটল ও খসে পড়া পলেস্তারায় রঙের প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন : খাতা-ব্যাগ দিয়ে বাসে সিট রাখা যাবে না, জবি প্রশাসনের যত নির্দেশনা 

ক্যাম্পাসের সবগুলো ভবনই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ভবন গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তৈরি। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তলা বিশিষ্ট বিবিএ ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রকল্প বুঝে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সে ভবনেরও অনেক জায়গায় বড় আকৃতির ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।

গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে উল্লেখ করে চিঠি দেয় রাজউক। এর মধ্যে দুটি পাঁচতলা আর দুটি চারতলা ভবন উল্লেখ থাকলেও কোন কোন ভবন তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভবন এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের চারটি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। এ চার ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম চলমান। এগুলো ভেঙে ফেললে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর বিকল্প কোনো জায়গা নেই।

ভবন ভাঙার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সবকটিই পুরনো ভবন। তবে রাজউকের মান অনুযায়ী, ভেঙে ফেলার মতো পরিস্থিতি কোনোটিতেই নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, যতক্ষণ ক্যাম্পাসে অবস্থান করি সেটা হোক ক্লাসরুম কিংবা প্রশাসনিক দপ্তর ততক্ষণই আতঙ্কে থাকি, কখন যেন কী হয়ে যায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনই ব্যবহারের অনুপযোগী। বাধ্য হয়েই এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এমন আতঙ্ক থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়া। কিন্তু সেটা করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : জগন্নাথের র‍্যাগিং চলে বাসে আর ক্লাসে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যে ভবনে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছি সে ভবনটির অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিনিয়ত ছাদ থেকে খসে পড়ছে চুন সুরকি। যতক্ষণ অফিসে থাকি মনের মধ্যে আতঙ্ক থাকে। যদি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে এ ভবন খুব সহজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত রহমান বলেন, দেশে ইদানীং যে হারে ভূমিকম্প হচ্ছে তাতে আমাদের মধ্যে ভয় জন্ম নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ভবনের অবস্থা নাজুক। ভবনগুলোকে কিছুদিন পর পর রং দিয়ে উপরে উপরে সংস্কার করা হয় যেন বাইরে থেকে বোঝা যায় বিল্ডিংগুলো খুবই মজবুত অবস্থায় আছে। প্রশাসনের উচিত এই ক্যাম্পাসের ভবনগুলো জোড়াতালি না দিয়ে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

আরও পড়ুন : ‘কাউকে জানালে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ঝুলিয়ে রাখব’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের সভাপতি আহসানুল হক রকি বলেন, অবকাশ ভবনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। একটু জোরে হাঁটলে কিংবা দেয়ালে টোকা দিলেই পলেস্তারা খসে পড়ে। এ অবকাশ ভবনে ২০টির অধিক সংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা প্রত্যেকেই আতঙ্কের মধ্যে থাকি। অবকাশ ভবনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রত্যেকটি ভবনই ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিত আছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, সরকার আমাদের যে নির্দেশনা দেবে আমরা সেটা অনুসরণ করার চেষ্টা করব। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। হুট করেই তো এগুলো ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। তার আগে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের। আমরা ভবনগুলো রেট্রোফিটিং করে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনে রেট্রোফিটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে, সামনে সবগুলো ভবনই রেট্রোফিটিংয়ের আওতায় আনা হবে।

রাজউকের চিঠি নিয়ে কী বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

রাজউকের চিঠির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি কিন্তু সেখানে চারটি ভবনের কথা উল্লেখ ছিল। তবে সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কোনটি সেটি বলা হয়নি। তারা (রাজউক) যে সার্ভে করেছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই অবগত নন। আমাদের কারো সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা না করেই তারা চিঠি দিয়েছে। আর চাইলেই চারটি ভবন ভেঙে ফেলার সুযোগ নেই। তার আগে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। সেটার জন্যও সময় প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভবনগুলোকে রেট্রোফিটিং করার জন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা প্রশাসনিক ভবনের কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে। এরপর একটি ডিজাইন দিলে বাকি কাজও শুরু হবে। ক্রমান্বয়ে সব ভবনকে এ প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা চলছে।  

এমএল/এসকেডি