ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে কেউ কাউকে র‍্যাগ না দিলেও প্রশাসনের চোখের আড়ালে বাস আর ক্লাসে জুনিয়রদের ওপর চলে মানসিক নির্যাতন।

সম্প্রতি র‍্যাগিংয়ের শিকার কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থী এমন দাবি করেছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে র‍্যাগ না দিলেও আড়ালে বিশেষ করে বাস ও ক্লাসরুমে পরিচয় পর্বের নামে চলে নির্যাতন।

নরসিংদীগামী নোঙর বাসে র‍্যাগিংয়ের শিকার মাইশা (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার সময় পরিচয়পর্বের নামে আমাদের ওপর যে মানসিক নির্যাতন চলে তা মুখে বর্ণনা করার মতো নয়। বাসে ওঠা থেকে শুরু করে বাস থেকে নামা পর্যন্ত পুরোটা সময় বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায় সিনিয়ররা।

আরও পড়ুন- জবি ছাত্র পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্যাম্পাস, ছাত্রলীগেও পদে আছেন

মাইশা আরও বলেন, আমাদের দিয়ে বাসের ভেতর গান গাওয়ানো, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয় করানো, বিভিন্ন অভিনেতাদের ডায়ালগ বলানোসহ বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। এছাড়া আমাদের মোবাইল ফোন পর্যন্ত তারা চেক করে। এমনকি সকলের সামনে বিভিন্ন পর্ণ তারকার নামও বলতে বাধ্য করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়। প্রথম দুই-তিন দিনে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী নোঙর বাসে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে সেই সংখ্যা দাড়িয়েছে ১০ থেকে ১৫ জনে। বাকিরা ক্যাম্পাসে আসলেও র‍্যাগিং থেকে বাঁচতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার বাদ দিয়েছেন।

শুধু নোঙর বাসেই নয় দূর্জয়, উল্কা- ১, ২, ৩ বাসসহ প্রায় সকলে বাসেই এ ধরনের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। তবে, দূরের গন্তব্যের বাসে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে।

আরও পড়ুন- জবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বহিষ্কার

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যার চাক্ষুষ সাক্ষী আমি নিজেই। আমার মেয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছে। সে বাসে এবং ডিপার্টমেন্টে উভয় স্থানেই র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছে। তার মানসিক অবস্থা এখন এতটাই ভয়াবহ যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেই এখন অনীহা দেখাচ্ছে। আজ ক্লাস থাকা সত্ত্বেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। একজন অভিভাবক হিসেবে বিষয়টি আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। 

বাসে র‍্যাগিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্তদের একজন বাবর বলেন, আমাদের বাসে কোনো র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমি শুধু বৃহস্পতিবার বাসে যাই আর রবিবার চলে আসি। আজকেও ছিলাম, তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুন- জবির অধ্যাপক থেকেই কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ চায় শিক্ষক সমিতি

র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। যদি কেউ অভিযোগ দেয়, আর সে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি তার প্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল টিম ক্যাম্পাসে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

উল্লেখ্য, র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অভিযুক্তকে বহিষ্কার করা হবে বলে গত ৮ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এমএল/এমজে