রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ও তাকে সহায়তাকারী রাবি ছাত্রলীগের নেতাসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম ও আটক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা রেহেনা বেগম জড়িতদের নামে নগরের মতিহার থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রক্সি চক্রের একটি গ্রুপের সঙ্গে চার লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চুক্তি করেন আহসান হাবীব। এর প্রেক্ষিতে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ ও ৬০ হাজার টাকার চেক পরিশোধ করেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভর্তি শেষে আহসান হাবীব বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আটকে রেখে শিক্ষার্থীর বাবার কাছে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে ওই প্রক্সি চক্র।

অভিযুক্তরা হলেন- ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আহসান হাবীব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ। এছাড়া অজ্ঞাত মো. সাকিব ও রাজুসহ আরও দুই-তিনজন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আরেক অভিযুক্ত মো. রাজুর পুরো নাম রাজু আহমেদ। তিনি শের-ই-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। রাজু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসেন মো. আহসান হাবিব নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য তার মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে আসেন। 

ভর্তি হওয়ার পর ওই ভবনের বাইরে এলে ওইদিন বিকেল পৌনে ৩টায় অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তি তাকে কৌশলে অপহরণ করেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা আবাসিক হলের ৩য় তলায় নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। 

পরে ছেলের কোনো সংবাদ না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে প্রক্টরিয়াল বডির লোকজনের সহায়তায় ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় শের-ই-বাংলা হল থেকে উদ্ধার করা হয় আহসান হাবীবকে। তারপর তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। মতিহার থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বীকার করে যে, সে নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে পলাতক আসামিদের সহায়তায় অপরের দ্বারা প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। 

এজন্য পলাতক আসামি মো. প্রাঙ্গনের সঙ্গে চার লাখ ৮০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। পরীক্ষায় পাস করার পর ওইদিন সকাল ১০টায় রাজশাহী রেলস্টেশনের সামনে রাস্তায় চুক্তির নগদ তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ৬০ হাজার টাকার চেক প্রদান করে। ভর্তি হওয়ার পর বাকি টাকা প্রদান করবে মর্মে অঙ্গীকার করে ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়ার পর টাকা না দেওয়ায় তারা তাকে অপহরণ করে শের-ই-বাংলা হলে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং বাকি টাকা না দিলে ধারালো ছুরি দেখিয়ে খুন-জখমের ভয় দেখায়। গ্রেপ্তারকৃত ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার প্রক্সি পরীক্ষা কোন পরীক্ষার্থী দিয়েছে তা বলতে পারেনি।

এ বিষয়ে মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে রাবি প্রশাসন ও আটককৃত আসামির মা পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।

জুবায়ের জিসান/এএএ