ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে জামিন না দিয়ে ১০ মাস কারাগারে রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। 

বুধবার (১২ জুলাই) সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। একই সঙ্গে খাদিজার মুক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিশ্চুপের সমালোচনা করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ রোধের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হলেও প্রথম থেকেই এর অপব্যবহার হচ্ছে। আইনমন্ত্রী নিজেও আইনটির অপব্যবহার যে হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে জামিন কোনো দয়া-মায়ার বিষয় নয় বরং অধিকারের বিষয়। এভাবে জামিন না দিয়ে খাদিজার মতো একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন রাষ্ট্র কোনোভাবেই ধ্বংস করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী মাসের পর মাস বন্দী থাকবেন আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়ে নিশ্চুপ থাকবে এটিও চলতে পারে না। আমরা খাদিজার মুক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চুপ থাকারও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, খাদিজার বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলার জামিন শুনানি চার মাসের জন্য মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর থেকে খাদিজার জামিনের আবেদন আদালতে বারবার খারিজ হচ্ছে। খাদিজাকে জামিন না দেওয়া চরম অমানবিক এবং আইন ও নীতি ভীরু, যা নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অবিলম্বে খাদিজাকে জামিন দেওয়াসহ তার বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা রকমের নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলেরও জোর দাবি জানাচ্ছি।

নাগরিকের বাকস্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, শুরু থেকেই এ আইনের জামিন অযোগ্য ১৪টি ধারা নিয়ে নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও প্রতিবাদ হয়েছিল এবং হচ্ছে। এই আইনের আওতায় এর আগেও দেশের অনেক মানুষ গ্রেপ্তার, কারারুদ্ধ ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এমনকি কারও কারও মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে, যা মানুষের বাকস্বাধীনতা থেকে নাগরিক অধিকারসহ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

বিবৃতিতে আর বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সব প্রকার মানবাধিকারের চালিকা শক্তি। মানুষকে মুক্ত স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। কেননা এভাবে মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করা যায় না। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।

প্রসঙ্গত, খাদিজা জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আলাদা দুটি মামলা হয়। একটি মামলা রাজধানীর কলাবাগান থানায়, অন্যটি নিউমার্কেট থানায়। দুটি মামলার বাদীই পুলিশ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এমএল/কেএ