প্রবল অবকাঠামো সংকট, শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা কম হওয়া, শ্রেণিকক্ষে জায়গা সংকুলান না হওয়া, মানহীন আবাসন ব্যবস্থাপনা, টিএসসি না থাকাসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত রাজধানীর ঢাকা কলেজ। এতসব সংকটের মাঝে প্রায় নয় বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে আশার প্রদীপ হয়ে আলো জ্বেলেছিল নতুন নির্মিত ১০তলা ভবন। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর চার বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই ভবনে লিফট সুবিধা চালু করা যায়নি। ফলে নবনির্মিত বিশাল এই ভবনের কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেন না কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ভবনটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর ‘অ্যাকাডেমিক কাম এক্সামিনেশন হল ভবন’ নামে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকা-১২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের নামে ‘লে. শেখ জামাল অ্যাকাডেমিক ভবন’ নামকরণ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত চার বছরের বেশি সময় পার হলেও লিফট না থাকার কারণে বিশাল এই ভবনে পুরোদমে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুত থাকার পরও সেসব কক্ষে ক্লাস করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নতুন ভবনটির সামনে স্থাপন করা হয়েছে নতুন নাম ফলক। জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মূল প্রশাসনিক ভবন থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ ও দর্শন বিভাগকে ইতোমধ্যেই স্থানান্তর করা হয়েছে এখানে। মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ স্থানান্তর করলেও লিফট না থাকার কারণে এ ভবনে এসব বিভাগের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। ভবনের দুইপাশের লিফটের ফাঁকা জায়গা ইট গেঁথে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন স্বয়ং শিক্ষকরাও। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, ভবন তৈরি হওয়ার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত লিফট স্থাপন করা হয়নি। যার কারণে ৬-৭ তালা বা উপরে উঠতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সময় বাধ্য হয়েই সিঁড়ি বেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ও বৃদ্ধ শিক্ষকরা উপরে উঠেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো লিফট না থাকার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম আটকে রয়েছে। মূলভবন থেকে এখানে অনেকগুলো বিভাগ স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন বিষয় কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সজীব মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, পর্যাপ্ত জায়গা এবং নিয়মিত পাঠদান নিশ্চিত করতে আমাদের বিভাগ মূল ভবন থেকে এখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে লিফট না থাকায় বিভাগের কোনও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। তাহলে নতুন ভবন করে কী লাভ হলো? আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন এই ভবনের লিফট স্থাপন করা হয়।

ওবায়দুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের চার বছরেও লিফট লাগানো যায়নি। এটি লজ্জাজনক ও হাস্যকর। আসলে সব ক্ষেত্রেই ঢাকা কলেজ পিছিয়ে পড়েছে। নতুন ভবনে তড়িঘড়ি করে বেঞ্চ ও ফ্যান লাইট লাগিয়েও কোনও সুফল পাওয়া গেল না। লিফটের জন্য আরও কতদিন অপেক্ষা করতে হবে সেটি আল্লাহ ভালো জানেন। আমরা শিক্ষার্থীরা খুবই হতাশ।

ঢাকা কলেজের সরকারি উন্নয়ন কাজ তদারকি কমিটির আহ্বায়ক ও গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অখিল চন্দ্র বলেন, আমরা নতুন ভবনের লিফটের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলছি। তারা বলেছেন খুব দ্রুতই ব্যবস্থা করে দেবেন।

লিফটের বিষয়টি বার বার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নজরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, আমি বলতে বলতে বিরক্ত৷ অনেকবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি৷ জানি না কবে কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকত বলেন, এটার (লিফটের) প্রসেসিংটা (প্রক্রিয়া) আলাদাভাবে হয়৷ এর আগে প্রসেসিং (প্রক্রিয়া) শেষে যে ঠিকাদার কাজ পেয়েছিলেন তিনি মারা যাওয়ায় নতুন করে রি-টেন্ডার হয়েছে৷ আর ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পেরে একটু দেরি হয়ে গেছে৷ তবে এটার অর্ডার হয়ে গেছে। আমরা আশা করি জুনের মধ্যেই কাজটা শেষ হয়ে যাবে।

আরএইচটি/কেএ