ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্য সেন হলের চারজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের পর জোরপূর্বক মুচলেকা নিয়ে হলছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেল ৩টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর, জেরা ও শেষে ‘মুচলেকা’ নিয়ে হল থেকে বের করে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

জানা যায়, ছাত্রত্ব শেষ হওয়া এক শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই চারজন শিক্ষার্থীদের মারধর করেন তারা।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ-আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা।

এদিকে ভুক্তভোগীরা হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আল আমীন ও একই সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।

মারধর শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তারা হলের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী আলম বাদশা বলেন, হলের ২০১৩-১৪ সেশনের অবৈধ ছাত্র সুমন আহমেদের মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান আমাদের গতকাল বিকেল ৩টায় তার রুমে ডেকে নেন। এরপর অকথ্য ভাষায় আমাদের গালিগালাজ করেন তিনি। এসময় সিয়াম ও তার সহযোগী আহাদ, হামিদ কারজাই মিলে আমাদের ফোন চেক করাসহ ফেসবুকে ডিটেইলস দেখেন। তবে তারা আমাদের কাছে কোনো ধরনের অনৈতিক তথ্য পায়নি। তারা আমাদের সবাইকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এছাড়া আমাদের এসময় তারা স্ট্যাম্প দিয়ে পিঠে এবং পায়ে প্রচণ্ড আঘাত করেন। ফলে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।

তিনি বলেন, সিয়াম রহমান আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সরকার বিরোধী মুচলেকা নেন এই বলে যে, আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি নাকি রুমের বড় ভাইকে অন্যায়ভাবে বের করে দিয়েছি এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই। আমার এরকম পোস্ট হলের বড় ভাইরা জানার পর হল থেকে বের করে দেন। এছাড়া আমি নাকি সজ্ঞানে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। মুচলেকা নেওয়া শেষে রাত ৮টার পর তারা আমাদের ছেড়ে দেন। এরপর থেকে আমরা হলের বাইরেই অবস্থান করছি।

এ বিষয়ে আজ হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান আলম বাদশা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিয়াম রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে জোরপূর্বক একজনকে বের করে দিতে চাইলে আমি তাদের রুমে ডেকে কথা বলি। কেন ছাত্রলীগের নাম ব্যাবহার করে তারা একজনকে বের করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন সময় হলে মেহমান নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাই। পরে তাদের ফেসবুকে পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করা একটি পোস্ট দেখা যায়। এ কারণে তাদের ভয় দেখানোর জন্য শুধুমাত্র একটি চড় মেরেছি তার গালে। এর বাইরে আর কেউ হাত তুলেনি।

জোরপূর্বক মুচলেকার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের আমি নিজেই হলে তুলেছি। তাদের মধ্যে তিনজন পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করার কারণে নিজ থেকেই হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। যাতে পুলিশি ঝামেলা বা কোনো ধরনের মারধরের শিকার হতে না হয়। পরে স্বেচ্ছায় তারা লিখিত দেন এই বলে যে, তাদের আমরা বের করে দেইনি। কিন্তু এখন তারা আমাদের নামে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন।

এদিকে আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ঘটনাস্থলে তার থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এছাড়া বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি এটা তেমন একটা সিরিয়াস বিষয় নয়। এখনো পর্যন্ত কারো লিখিত অভিযোগও পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখব।

এইচআর/এফকে