রাজিব হাসান শিবলী, তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। শখের বসেই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও তৈরি করে নিজের ফেসবুক পেইজে আপলোড করতেন। সেই শখই এখন তাকে বানিয়েছে লাখপতি। ঘরে বসেই প্রতি মাসে আয় করছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।

পথচলার শুরুটা মোটেও মসৃণ ছিল না রাজিবের। চলতি পথে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক বাধা পথ। শুরু দিকটায় বন্ধু-বান্ধব এমনকি পরিবার-পরিজনের কাছেও টিপ্পনী শুনতে হয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে সফলতার দেখা পেয়েছেন তিনি।

ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে নিয়মিত আয় করা রাজিব জানান, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নবগ্রামে তার জন্ম। নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় সাড়াতলা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। পরে ভর্তি হন যশোরের বিএএফ শাহীন কলেজে। সেখান থেকেই শেষ করেন উচ্চ মাধ্যমিক পাস। স্বপ্ন ছিল কূটনৈতিক হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে।

নিজে আয় করে পড়াশোনার খরচ যোগানোর তাগিদে এক পর্যায়ে চাকরি শুরু করেন রাজিব। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। সেই থেকে ঘরে বসে উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন তিনি।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। রাজিব চিন্তা করলেন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু একটা করতে হবে। সে চিন্তা থেকেই খুলে ফেলেন ফেসবুক পেইজ আর ইউটিউব চ্যানেল।

এরপর পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক ভিডিও বানিয়ে দিতে থাকেন ফেসবুক-ইউটিউবে। তখনও রাজীবের ভিডিও খুব বেশি মানুষ দেখতেন না। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় ২০২১ সালে। ওই বছরের জুনে হঠাৎ করেই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর ভাইরাল হয় আরও পাঁচটি ভিডিও। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজীবকে।

প্রতিদিনই বাড়তে থাকে রাজিবের ফেসবুক ফলোয়ারের সংখ্যা। এখন সেটি ছাড়িয়েছে ১ দশমিক ৪ মিলিয়নে। ভিডিও আপলোড করলেই তা মুহূর্তেই চলে যায় মিলিয়ন মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে।

রাজিব হাসান শিবলি বলেন, ফেসবুক-ইউটিউবে মানুষের বাস্তব জীবনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, সত্য ঘটনার ছায়া, জীবনদর্শন আত্ম-উন্নয়নমূলক বিষয়ে কথা বলি। প্রতিদিন ফেসবুকে অন্তত একটি ভিডিও আপলোড দেয়ার চেষ্টা করি। কূটনৈতিক হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এখন আর সে দিকে পা বাড়াচ্ছি না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা আমার।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে ফেসবুক থেকে অর্থ আয়ের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরে অভিজ্ঞদের পরামর্শ ও কিছু মানুষের সহায়তায় বিষয়গুলো জানতে পারি।

বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনের সহায়তা শুরুতে না পাওয়া গেলেও এখন সবাই বেশ সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, বন্ধুবান্ধব পরিবার-পরিজন শুরুতে নিরুৎসাহিত করেছিল। তবে এখন আর কেউ সমালোচনা বা হাসাহাসি করেন না। পড়ালেখা শেষ করার পর চাকরি নয়, বরং নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই।

বর্তমানে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের তরুণ প্রজন্ম ভালো কিছু করতে পারবে বলে এসময় আশা প্রকাশ করেন রাজীব। তিনি বলেন, আমি মনে করি সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে অনেক বেকার স্বাবলম্বী হতে পারেন। চুপ করে বসে না থেকে নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

আরএইচটি/এমএইচএস