সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ উঠায় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনা ও সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিলন ঢালী ও সাধারণ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম বাপ্পীসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও সম্মান রক্ষার্থে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমসহ কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। ‘পার্টিসিপেশন অব উইমেন ইন অ্যাকুয়াকালচার ইন থ্রি কোস্টাল ডিসট্রিক অব বাংলাদেশ : অ্যাপ্রোচেস টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবল লাইভলিহুড’ শিরোনামে ১৬ পৃষ্ঠার ওই সম্মিলিত গবেষণা নিবন্ধটি ২০১২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচার সার্ভিসেসে’ প্রকাশিত হয়। যার বেশিরভাগ অংশই নকল বলে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি শনাক্ত করার সফটওয়্যার টার্নইটইনে যাচাইয়ে দেখা গেছে। অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠার পর এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য টার্নইটইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিবন্ধটি যাচাই করা হয়। টার্নইটইনে নিবন্ধটি যাচাইয়ের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। 
এতে দেখা যায়, নিবন্ধটির ৮৮ শতাংশের সঙ্গে বিভিন্ন জার্নাল ও আর্টিকেলে প্রকাশিত লেখার মিল রয়েছে। যেগুলো ওই গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ হওয়ার আগেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া যৌথভাবে প্রকাশিত নিবন্ধটির কিছু অংশ বিভিন্ন সময় হুবহু অন্য নিবন্ধেও ব্যবহার করেছেন সাদেকা হালিম। এটিও চৌর্যবৃত্তির মধ্যে পড়ে। একটা গবেষণার লেখা অন্য কোথাও ব্যবহার করা যায় না। তারপর এই নিবন্ধটি সম্মিলিত, এটা কোনোভাবেই অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। এটা চৌর্যবৃত্তির মধ্যে পড়ে।

সাদেকা হালিম অনুষদের ডিন পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে আল মামুন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে পুরো দেশ ও জাতি সবসময় তাকিয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান ও মর্যাদা অনেক উপরে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এরকম গবেষণা জালিয়াতির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে লজ্জায় আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। কিছু শিক্ষকের দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো শিক্ষক সমাজ কখনওই নেবে না। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার কাছে শিক্ষার্থীরা কখনওই ভালো কিছু আশা করতে পারে না। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অধ্যাপক সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা, সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এ সময় বক্তারা আরও বলেন, অধ্যাপক সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে এ জাতীয় লজ্জাজনক অধ্যায় বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে বলে আমরা মনে করি।

মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি, মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার্থে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অধ্যাপক সাদেকা হালিমকে তার ডিনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং জালিয়াতি প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এফআর