বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার আলিয়া মাদ্রাসায়
বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করছেন রাজধানীর সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে নিজস্ব পানির পাম্প বা নলকূপ না থাকায় খাবার পানির চরম সংকটে পড়েছেন তারা। একমাত্র ভরসা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতেও মিলছে না স্বস্তি। অধিকাংশ সময়ই লাইনের পানিতে ময়লা, পুরনো লোহার পাইপের মরিচার গুঁড়ার উপস্থিতিতে ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ তো রয়েছেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার দুটি হলে ছয়শতাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই দুটি হলের কোনোটিতেই নেই নিজস্ব কোনো পাম্প বা নলকূপ। একই সঙ্গে রিজার্ভ ট্যাংকির পানি সরবরাহের পাইপের অধিকাংশই ভাঙা। আর রিজার্ভ টাংকির ঢাকনাও দেওয়া হয়েছে টিন এবং পলিথিন দিয়ে। এসব টাংকির পানি কোনো ধরনের ফিল্টার বা বিশুদ্ধকরণ ছাড়াই পুরো হলজুড়ে সরবরাহ হচ্ছে । শুধু আল্লামা কাশগরী হলের ডাইনিংয়ে একটি মাত্র বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার রয়েছে। তাও শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় এর কার্যক্ষমতা কম থাকায় অধিকাংশ সময়ই এক গ্লাসের বেশি পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসজুড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট। বিশেষ করে মাদ্রাসার আল্লামা কাশগরী হল ও শহীদ ইব্রাহিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা রয়েছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে গোসল, অজুসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড চললেও পান করার জন্য তা মুখে দেওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য নির্ভর করতে হচ্ছে কেনা পানির ওপর।
আরও পড়ুন : ঢাকা কলেজ : বাইরে ফিটফাট, ভেতরে...
তারা অভিযোগ করে বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাদ্রাসা ও হল প্রশাসনের কোনো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নেই। হলগুলোর রিজার্ভ ট্যাংকি দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার করা হয় না। সেখানে কয়েক স্তরের ময়লা জমেছে। আর এ নোংরা ও ময়লা মিশ্রিত পানিতেই চলছে হলের ডাইনিংয়ে রান্নার কাজ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এসব খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। অনেকে নিজেদের খরচে বাইরে থেকে পানি কিনে পান করলেও অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে এ ময়লা পানিই পান করছেন। ফলে সম্প্রতি পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের হারও বেড়েছে।
শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হল প্রশাসন বেশ কিছু পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার স্থাপন করলেও বর্তমানে তার সবগুলোই অকেজো। এনিয়ে বারবার সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
আব্দুল আজিজ নামে ফাজিল (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, অধিকাংশ সময়ই পানি পাওয়া যায় না। গোসলের পানিতে গাছের পাতা, বালি পাওয়া যায়। হঠাৎ করে আবার কালো পানি আসে। গোসলের জন্য যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় সেটি তো আর কিনে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ময়লা পানি দিয়ে গোসল করি। ফলে চুলকানি, দাদসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আমরা নিদারুণ কষ্টে রয়েছি। মাদ্রাসা প্রশাসন যদি বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখে তবে আমাদের জন্য ভালো হয়।
মুরাদ হোসাইন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, হলে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট চলছে। পানির ট্যাংকিগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। যার ফলে ময়লা জমে থাকে। আর ট্যাপ ছাড়লেই ময়লাযুক্ত কালো পানি পড়ে। কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যা বিষয়ে জানানো হলেও সে বিষয়ে তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। মাদ্রাসা প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ভাবা। পানির জন্য প্রতিদিন কী পরিমাণ কষ্ট করতে হচ্ছে তা বলে বোঝানো যাবে না।
আরও পড়ুন : হাত দিলেই নড়ে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সীমানাপ্রাচীর
এ অবস্থায় দ্রুত পানির সংকট নিরসন এবং আবাসিক হলগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে নিজস্ব পাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে একটি আবেদনপত্রও জমা দিয়েছেন তারা।
বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুতই মাদ্রাসায় পানির সংকট নিরসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, পানি সমস্যার বিষয়টি আমি অবগত রয়েছি। যতটুকু জানি এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। ছাত্ররাও আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি অল্প কিছুদিন হলো, তারপরও দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
আরএইচটি/এসকেডি