ঢাবির ছাত্রী হলের ‘সংকট’ নিরসনে তিনদিনের আল্টিমেটাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না থাকলেও অদ্ভুত কিছু নিয়ম মানা হয় ছাত্রীদের হলগুলোতে। এসব নিয়মের পরিবর্তন চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের নারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় সমস্যা সমাধানে ৬টি দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। আগামী তিনদিনের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো অনাবাসিক ও এক হলের ছাত্রীদের অন্য হলে ঢোকার ব্যবস্থা করা; খাবারের মান বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা; পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার স্থাপন করা; হলের কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য কমানো এবং ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ; হলে ফার্মেসী স্থাপন এবং কোনো ছাত্রী রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা; ও অগ্রিম অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া নাম এন্ট্রির মাধ্যমে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত লেট গেইট দিয়ে ঢোকার ব্যবস্থা করা।
মানববন্ধনের অন্যতম আয়োজক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ও শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আশরেফা তাসনিম বলেন, হলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ভবনে তালা মেরে দেওয়া হয়। কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে কোনো মেয়ে সেখান থেকে রক্ষা পাবে না। এক হলের মেয়েরা আরেক হলে ঢুকতে পারে না। এমনকি, অনাবাসিক মেয়েরা নিজেদের হলে ঢুকতে পারে না। মেয়েদের হলে ফার্মেসি নাই। খাবারের দাম নেওয়া হয় অনেক বেশি কিন্তু মান ও পরিমাণ অনেক কম। মেয়েদের হলে মা-বোনদের ঢুকতে দেয় না।
‘আমার ভাত খেতে বিশ টাকা লাগে। তাহলে আমি তরকারি কিনব কি দিয়ে। আমি কৃষকের মেয়ে। ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়াও অনেক বেশি। এখানে মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা কি মানুষ না? আমরা ভাত খেতে পারব না, পানি খেতে পারব না। রোকেয়া হলে ওয়ারড্রোব ঢুকাতে দেয় না, শামসুন্নাহার হলে আবার পাঁচ তাকের ওয়্যারড্রোব রাখতে দেয় না। কেন? এখান থেকে লাফ দিয়ে কেউ আত্মহত্যা করবে? হলে কোনো সিলিং ফ্যান নেই। এখানে নাকি আত্মহত্যা করবে!’
আশরেফা বলেন, গেস্টরুমে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানো হোক। কোনো মেয়ে অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসার জন্য কোনো ফার্মেসি ও ঔষধের ব্যবস্থা নাই। ডাকসু থাকাকালীন অনেক সুযোগ সুবিধা পেত মেয়েরা। কিন্তু আজ ডাকসু না থাকায় মেয়েরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, ডাকসু না থাকার কারণে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মেলবন্ধন নাই। প্রশাসনের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষকরা ঠিকই বেতন নেন কিন্তু হলগুলোতে নূন্যতম কোনো মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হয় না। আজকে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে কোনো মেলবন্ধন নেই। প্রশাসন এই দাবিগুলো মেনে নিক। এতে করে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দূরত্ব কমে আসবে।
শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, খাবারের মান আর রুমগুলো নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হই। হল প্রশাসনকে বললে তারা কিছু করতে পারে না। যেসব পরিবেশে রান্না করা হয় এখানে খাওয়ার কোনো উপায় নেই। অনেকে রান্না করতে বেসিনের পানি নিতে বাধ্য হয় কারণ ফিল্টারে কোনো পানি নেই।
হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ঢুকতে না দেওয়াকে জঘন্যতম নিয়ম বলে মনে মন্তব্য করেন নুসরাত। তিনি বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা সংযুক্ত থাকার পরেও অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা তার হলে প্রবেশ করতে পারছে না। এর থেকে জঘন্য নিয়ম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বলে আমার মনে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাগত অবহেলা ও নানা রকমের অযত্নের কারণে শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে আসছে নানা রকমের দুর্যোগ।
এইচআর/এমএ