ঢাবির হলে থাকতে হলে মানতে হবে ‘ছাত্রলীগের ১৪ নিয়ম’
হলের ভেতর এবং বাইরে বড় ভাইদের সালাম দিতে হবে। সালাম দেওয়ার সময় ডান হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে হবে, বাম হাত পেছনে রাখতে হবে। এ সময় বড় ভাইদের হাতে ঝাঁকি বা চাপ দেওয়া যাবে না। ছাত্রলীগের সব প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে। হলে থেকে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠন যেমন- ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাম সংগঠন করা যাবে না।
প্রথমে মনে হতে পারে, এগুলো কোনো কারাগার বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকার নিয়মাবলী। কিন্তু না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকতে হলে মানতে হবে এই অদ্ভুত নিয়মগুলো।
বিজ্ঞাপন
যদিও হলে উঠার সময় হল কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশনায় এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশেও নেই এ ধরনের কোনো নির্দেশনা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের এ নির্দেশনাগুলোর বাইরে অন্য অনেকগুলো অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেগুলো না মানলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে জারি করা একটি নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইদের’ লিখিত ‘জিয়া হলে থাকতে হলে…’ শিরোনামে এই নির্দেশনায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই পালনীয় ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-
১. হলের ভেতর এবং বাইরে বড় ভাইদের সালাম দিতে হবে। সালাম দেওয়ার সময় ডান হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে হবে, বাম হাত পেছনে রাখতে হবে। এ সময় বড় ভাইদের হাতে ঝাঁকি বা চাপ দেওয়া যাবে না।
২. ছাত্রলীগের সব প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে।
৩. মসজিদ, টিভি রুম, রিডিং রুম, বাথ রুম, ক্যানটিন, মেস, ওয়াইফাই জোন এবং সেলুন দোকানে সালাম দেওয়া যাবে না।
৪. একসঙ্গে অনেক বড় ভাই থাকলে চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী সালাম দিতে হবে।
৫. প্রত্যেক বড় ভাই এবং ইয়ারমেটের নম্বর রাখতে হবে।
৬. গেস্ট রুমে লুঙ্গি, ট্রাউজার, টি-শার্ট ও মোবাইল প্যান্ট পরে আসা যাবে না। এমনকি রাত ১২টার পরও এগুলো পরে রুমের বাইরে আসা যাবে না।
৭. ক্যান্টিনে প্রথম ৪টি সারিতে বসা যাবে না।
৮. টিভি রুমের প্রথম সারির চেয়ারগুলোতে বসা যাবে না এবং রিমোট হাতে নেওয়া যাবে না।
৯. চেইন অব কমান্ড মানতে হবে।
১০. বড় রিডিং রুম ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই ছোট রিডিং রুমে প্রবেশ করা যাবে না।
১১. হলে ধূমপান করা যাবে না। তবে রুমে পরিবেশ থাকলে ধূমপান করা যাবে।
১২. ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠন যেমন- ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাম সংগঠন করা যাবে না।
১৩. ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৪. হলের যেকোনো বিষয়ে ইমিডিয়েট বড় ভাইদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের আবশ্যিকভাবে এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়। না মানলে ‘বড় ভাইদের’ কাছে প্রশ্ন ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, গেস্ট রুমে বড় ভাইরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বোকা বানানোর জন্য অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করে। অনেক সময় নানান অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি নিজেরাও করেন। এমনকি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও করতে বাধ্য করে। পান থেকে চুন খসলেই নানানভাবে অপমান-নির্যাতন করা হয়।
তবে এটি ছাত্রলীগের নয়, এটি ভুয়া লিস্ট বলে মন্তব্য করেছেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন। তিনি বলেন, আমি লিস্টটি দেখেছি। এটি একটি ভুয়া লিস্ট। হল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, সেই লিস্টটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। হল প্রাঙ্গণের কোথাও আমি এই লিস্ট দেখিনি। দেখলে আমি অবশ্যই প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিতাম। কে বিজ্ঞপ্তিটি দিল আর কোথা থেকে বিজ্ঞপ্তিটি এলো সে বিষয়েও খোঁজ নিতাম।
এইচআর/এমএইচএস