শিক্ষার্থীকে থানায় দিল ঢাবি প্রশাসন, ছেড়ে দিল পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে বিভাগের মেসেঞ্জার গ্রুপে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে একজন শিক্ষার্থীকে ‘জঙ্গি’ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দিয়েছেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন। এ অভিযোগে তাকে থানায় দেয় হল প্রশাসন। যদিও তদন্ত শেষে নিরাপরাধ প্রমাণ পাওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মিফতাহুল মারুফকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন। এরপর শাহবাগ থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে একটি মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের অফিশিয়াল নোটিশ গ্রুপে (মেসেঞ্জার) তার একটি মন্তব্য লিখে মেসেজ দেন। মারুফ সেখানে লেখেন, ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে (চালিয়েছে) জামায়াতুল মুজাহিদীন নামে একটা জঙ্গি সংগঠন, বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। এই ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি দায়ী তারা হয় তাহলে ২০০৮-বর্তমানে গুলশানসহ সব জঙ্গি হামলার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ।’
আরও পড়ুন: ‘মদ্যপ’ ছাত্রলীগ নেতা ঢুকে পড়লেন ছাত্রীদের ওয়াশরুমে!
মারুফের সেই মেসেজের স্কিনশট নিয়ে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর মোবাইল ফোন চেক করে হল প্রভোস্টের হাতে তুলে দেন তিনি। আর এই একটা মেসেজের ভিত্তিতেই প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয় মারুফকে।
সেসময় শিক্ষার্থীকে থানায় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন তাকে (মারুফ) জঙ্গি কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে পুলিশে সোপর্দ করার কথা জানান সাংবাদিকদের।
পরে সকাল থেকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম শাহবাগ থানায় এসে শাহবাগ থানার ওসির সাথে কথা বলেন। আলোচনার পর শিক্ষকের উপস্থিতিতে তাকে (মারুফ) মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মাঝে মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মেসেঞ্জার গ্রুপে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা, ডিবেট এসব হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এগুলোর চর্চা করার চেষ্টা করি। কিন্তু মারুফের ওই বক্তব্যের মধ্যে সন্দেহজনক কী থাকতে পারে সেটা কোনভাবেই বোধগম্য নয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, মারুফের সাথে শত্রুতা করে তার কোনো বন্ধু সামান্য মন্তব্যকে নেতাদের দিয়ে উস্কে দিয়েছে। বিভিন্নভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। হল প্রশাসনও ভালোভাবে যাছাই বাছাই না করে তাকে পুলিশে দিয়ে দিয়েছে। ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা যেত।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদূত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, তার বিষয়ে অভিযোগ পাবার পর আমরা তার এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। তার পরিবারের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সাথেই সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই। সে যে মন্তব্য করেছে এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মতামত। তাই আমরা তদন্তের পরে তাকে একটি মুচলেকা দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, এটা হল প্রশাসনের বিষয়। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ কথা বলবেন।
কোনো তদন্ত না করেই কেন থানায় দেওয়া হলো এমন প্রশ্ন করলে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু তদন্ত করা সম্ভব আমরা সেটা করেছি। এরপর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। বাকি কাজ তারা করেছে।
এইচআর/এমএ